ইভ্যালির কার্যালয়ে তালা, ভাউচার পণ্যও মিলছে না

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: টাকা দিয়ে পণ্য না পাওয়ার এবং পণ্য সরবরাহ করে টাকা না পাওয়ার অভিযোগের পর এবার কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি। বকেয়ার টাকা ফিরে পেতে অনেকেই ভিড় করছেন রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ইভ্যালির কার্যালয়ের সামনে। নিরুপায় গ্রাহকরা হটলাইনেও ফোন করে কাউকে পাচ্ছেন না। ইভ্যালির ফেসবুক পেইজে ক্রেতা ও বিক্রেতারা নানা অভিযোগের কথা বলছেন, কিন্তু এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলকে পাওয়া যাচ্ছে না।

গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করাসহ নানা অভিযোগে ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসা আর্থিক অনিয়মগুলো তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইভ্যালি ডটকমের চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬.১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বা অর্থ ফেরত দিতে পারবে। বাকি গ্রাহক এবং পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বা মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধ করা ওই কম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়। এ ছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে নেওয়া ৩৩৮.৬২ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, যা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।’

গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অগ্রিম এবং মার্চেন্টের পাওনা ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ ও পাচারের’ অভিযোগে এরই মধ্যে ইভ্যালির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এর অংশ হিসেবে রাসেল ও তাঁর স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর এক-দুই মাসের আগাম সময় নিয়ে প্রায় অর্ধেক মূল্যে পণ্য সরবরাহের বিভিন্ন ‘অফার’ দেওয়া শুরু করেছিল ইভ্যালি। তাতে অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি, প্রাইভেট কারসহ নানা পণ্যের ক্রেতাদের ভিড় জমেছিল ইভ্যালিতে। স্বল্প মূল্যের এসব পণ্যের জন্য টাকা নেওয়া হতো অগ্রিম, কিন্তু কিছু ক্রেতাকে পণ্য দিয়ে বাকিদের অপেক্ষায় রাখার কৌশল নিয়ে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল বলে পরে অভিযোগ উঠতে শুরু করে।

চলতি মাসের শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক নীতিমালায় বলা হয়, অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোকে পণ্যের অর্ডার নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা সরবরাহ করতে হবে এবং ১০ শতাংশের বেশি অগ্রিম টাকা নেওয়া যাবে না। এর পর থেকে ভাউচারের অফার দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এতে ক্ষতির মুখে পড়েন প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরা।

এদিকে গ্রাহকের অসংখ্য অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইভ্যালির কাছে এসবের জবাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ই-ক্যাব। ই-ক্যাব থেকে এরই মধ্যে কম্পানির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল শুক্রবার কার্যালয়ের সামনে গ্রাহকদের ভিড় করতে দেখা গেছে। পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন কম্পানির প্রতিনিধিরাও ঘুরে যাচ্ছেন, কিন্তু ইভ্যালির অফিস তালাবন্ধ। ইভ্যালি অফিসের সামনে চা বিক্রেতা মানিক জানান, লকডাউন ঘোষণার তিন দিন আগে থেকে ওই অফিস বন্ধ। তার আগে সব সময় ইভ্যালি অফিস খোলা থাকতে দেখেছেন তিনি।

ভবনের নিচে দায়িত্বরত এক নিরাপত্তাকর্মী জানিয়েছেন, কঠোর লকডাউন শুরুর আগে গত ২৭ জুন থেকে অফিস বন্ধ রেখেছে ইভ্যালি। ঈদের আগে আর খোলার সম্ভাবনাও নেই।

ইভ্যালির ফেসবুক পেজেও একটি নোটিশে লেখা হয়েছে, ‘মহামারি পরিস্থিতির কারণে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোম অফিস চালু আছে। ফলে এই অফিস থেকে সশরীরে কোনো সেবা দেওয়া হবে না।’

এদিকে ইভ্যালির মার্চেন্টদের কেউ কেউ গ্রাহকদের পণ্য দিচ্ছে না। ইভ্যালির দেওয়া ভাউচার দিলেও প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের বলছে ইভ্যালির কাছ থেকে পণ্য বুঝে নিতে। কারণ ভাউচারের বিপরীতে ইভ্যালি তাদের পাওনা পরিশোধ করেনি। আবার চেক দিলেও ওই চেক ব্যাংকে জমা না দিতে বলছে ইভ্যালি। কারণ তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে টাকা নেই।

টাকা পাচ্ছে না বলে পণ্য সরবরাহকারীদের কেউ কেউ ইভ্যালির দেওয়া গিফট ভাউচারের বিপরীতে পণ্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এসব নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে কয়েক দিন ধরে। এত দিন মূল অভিযোগ ছিল, গ্রাহকদের একটা অংশ সময়মতো পণ্য পাচ্ছে না।

গত বুধবার দেশি পোশাকের ব্র্যান্ড ‘রঙ বাংলাদেশ’ এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ইভ্যালি যে গিফট ভাউচারগুলো কিনেছিল, সেগুলো নিয়ে বিশেষ সমস্যায় পড়েছে তারা। গিফট ভাউচার নিলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টাকা পরিশোধ করেনি ইভ্যালি। অনেকবার যোগাযোগ করলেও ইভ্যালি এ ব্যাপারে সন্তোষজনক উত্তর দেয়নি। ফলে ইভ্যালির এই ভাউচার ব্যবহার করে তারা এখন কেনাকাটা করতে দিতে পারছে না।

ইউকে/এএস