গাড়ি বিক্রির জট খুলল প্রগতির

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: এক বছর পর গাড়ি বিক্রির জট খুলল রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র গাড়ি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (পিআইএল)। কভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির অংশ হিসেবে গত বছরের ৮ জুলাই জারি করা এক পরিপত্রে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় সব রকম যানবাহন ক্রয় বন্ধ থাকার কথা জানানো হয়।

গত ১ জুলাই আরেক পরিপত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরে পরিচালন বাজটের আওতায় এসব প্রতিষ্ঠানকে যানবাহন কেনার বরাদ্দকৃত বাজেটের ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

সরকারের এই ঘোষণায় আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে প্রগতি। তবে চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে পরিপত্র জারি হওয়ায় এর প্রভাব এখনো বোঝা যাচ্ছে না। বরং সরকারি অফিস-আদালত খোলার পর গাড়ির চাহিদা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন পিআইএল কর্মকর্তারা।

পিআইএল সূত্র জানায়, গত বছরের ৮ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জারি করা পরিপত্রের পর এক ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিল প্রগতি। করোনার মধ্যেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছিল প্রগতি। এর মধ্যেই এমন পরিপত্রে গাড়ি বিক্রি বন্ধের কারণে যেমন মূলধন আটকে আছে তেমনি প্রায় ৪০০ জন কর্মীর বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি। আবার জাপানের মিত্সুবিশি মোটরস করপোরেশনের (এমএমসি) সঙ্গে সিকেডি আমদানির শর্ত ভঙ্গ হলে চুক্তি বাতিলের আশঙ্কায় ছিল প্রগতি কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে জারিকৃত পরিপত্রের শর্ত কিছুটা শিথিল করতে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে চিঠি দিয়েছিল পিআইএল কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, বিগত ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো পিআইএলের গাড়ির প্রধান ক্রেতা। কয়েক বছর ধরেই এমন ধারাবাহিক মুনাফাকে কম্পানির পরিচালন মূলধন ভিত্তি ধরে নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নযোগ্য কয়েকটি উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে পিআইএল অগ্রসর হচ্ছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অত্যাধুনিক অটোমেটিক অ্যাসেম্বল প্লান্টের ডিটেইল লে-আউট, ড্রয়িং, ডিজাইন ও প্রাক্কলন ব্যয় প্রস্তুত, ঢাকায় ৩৭ তলা ভিত্তিবিশিষ্ট প্রগতি টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে আধুনিক সার্ভিস সেন্টার ও নিজস্ব অফিস ভবন নির্মাণ অন্যতম।

প্রগতির কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘ সময় গাড়ি ক্রয় বন্ধ রাখায় জাপানের মিত্সুবিশি মোটরস করপোরেশনের (এমএমসি) সঙ্গে করা চুক্তি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা ছিল। বর্তমানে শুধু জাপানের মিত্সুবিশি মোটরসের সঙ্গে পাজেরো স্পোর্ট (কিউএক্স) এসইউভি জিপ এবং মিত্সুবিশি এল-২০০ ডাবল কেবিন পিকআপের সিকেডি সংযোজনের চুক্তি বলবৎ রয়েছে। চুক্তির শর্ত ও পিপি-১ মোতাবেক যথাক্রমে বার্ষিক ৬০০ ইউনিট পাজেরো (কিউএক্স) জিপ এবং প্রথম বছরে ১২০০ ইউনিট, দ্বিতীয় বছরে ১৫০০ ইউনিট ও তৃতীয় বছরে ২৫০০ ইউনিট ডাবল কেবিন পিকআপের সিকেডি যন্ত্রাংশ আমদানির শর্ত রয়েছে।

অন্য কোনো গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কম্পোনেন্ট সাপ্লাই অ্যাগ্রিমেন্ট নেই এবং পিআইএলের বিকল্প আয়ের কোনো উৎসও নেই। সিকেডি আমদানির ক্ষেত্রে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হলে এমএমসি চুক্তি বাতিল করতে পারে। যদিও পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি এবং সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হওয়ায় এ যাত্রা চুক্তিটি টিকে গেছে বলে জানালেন পিআইএল কর্মকর্তারা।

এ প্রসঙ্গে প্রগতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘এই কঠিন সময়েও আমরা সরকারের জরুরি ক্রয় নীতিমালায় ৩৪৪টি গাড়ি বিক্রি করেছি। এতে প্রগতির নিট মুনাফা হয়েছে ছয় কোটি টাকা। তবে নতুন পরিপত্রে কৃচ্ছ সাধনের মধ্যেও যানবাহন কেনায় বাজেটের ৫০ শতাংশ ব্যয় করার যে অনুমোদন দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রগতির জন্য স্বস্তির।’

ইউকে/এএস