নিরন্ন মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে ছোটরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার এই দীর্ঘ মহামারিতে বিনিদ্র রজনী কাটছে অনাহারী মানুষের। প্রথম ঢেউয়ের সময় অনেকেই এগিয়ে এসেছিলেন ত্রাণ নিয়ে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন।

ব্যক্তি উদ্যোগেও নানান তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। সরকারি তৎপরতাও ছিল বেশ। এক কথায়- রাস্তার ধারে, ফুটপাতে বসে থেকেও নিরন্ন মানুষগুলো খাদ্য ও অর্থসহ নানান সহায়তা পেয়েছিল। কিন্তু এবার মানুষ পথের ওপর বসে থেকেও সাহায্য পাচ্ছেন না। মহামারির এই সময়ে গরীব, অসহায়, ছিন্নমূল ও রিকশাচালকরা বছরের বেশিরভাগ সময়ই ঘরবন্দি থাকছেন। দফায় দফায় লকডাউনে পড়ছে রাজশাহীও।

সহায়-সমন্বলহীন এ মানুষদের দুর্দশার যেন শেষ নেই। অধিকাংশ সময়ই রোজগার বন্ধ থাকছে। পরিস্থিতি এমন যে, মানুষের কাছে হাত পেতে বা চেয়ে খাওয়ারও কোনো উপায় থাকছে না তাদের। ফলে কর্মের অভাবে অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।

ঠিক এ মুহূর্তে রাজশাহী মহানগরীতে ছিন্নমূল অসহায় মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে শিশু-কিশোরদের সংগঠন ‘হেল্প পিপল অর্গানাইজেশন’। এই সংগঠনের সবাই বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র। দুই বছরেরও বেশি সময় থেকে স্বেচ্ছ্বাসেবী সংগঠনটি এই প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।

ব্যতিক্রমী এই সংগঠন অসহায়দের খুঁজে বেড়ায়। তাদের কাছে টেনে নেয়। আদর ও ভালোবাসায় মুড়িয়ে দেয় কিছুটা মুহূর্ত। তাই বিভীষিকাময় জীবনে ক্ষণিকের জন্য হলেও জেগে ওঠে প্রাণের স্পন্দন। অসাধারণ কাজটি করে চলেছেন আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসা স্বাপ্নিক তরুণরা।

মহানগরীতে ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা কম নয়। তাই করোনা মহামারিতে অসহায় মানুষের দুর্দশা দেখে একদল যুবক জোট বেঁধে ‘হেল্প পিপল অর্গানাইজেশন’ নামের সংগঠনটি শুরু করেন।

ক্ষুধার্তকে এক বেলা খাওয়ানোর আনন্দ থেকে তাদের যাত্রা শুরু ‘২ টাকার হোটেল’ দিয়ে। স্বল্প পরিসরে হলেও শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে সংগঠনটি। বর্তমানে সপ্তাহের নির্দিষ্ট একটি দিনে তারা একবেলা খাবার বিতরণ করছেন তারা। কেবল খাবার বিতরণ নয়, অসহায় মানুষগুলোর আত্মসম্মানের দিকেও লক্ষ্য রাখছেন তারা।

খাবার বিনামূল্যে বিতরণ করা হলে তাদের তৈরি হবে- এই ধারণা থেকে খাবার মূল্য ২ টাকা ধরা হয়েছে। সংগঠনের লক্ষ্য, ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক যেন সমান এবং সমুন্নত থাকে। কখনোই যেন বড়-ছোট ভেদাভেদ তৈরি না হয়।

আর যারা এ খাবার বিতরণ করছেন, তারাও খুব একটা স্বচ্ছল নয়। তাদের বড় কোনো তহবিল নেই, বড় কোনো অর্থদাতা নেই। নিজেদের প্রতিদিনের খরচ থেকে টাকা জমিয়ে প্রতি মাসের শুরুতে সবার টাকা একত্র করে কেনা হয় চাল, ডাল, লবণ, তেলসহ রান্নার প্রয়োজনীয় উপকরণ।

তারপর নিজেরাই রান্না করে সপ্তাহে একদিন বিভিন্ন এলাকায় তারা খাবার বিতরণ করেন। সর্বশেষ তারা রাজশাহী মহানগরীর ভদ্রা বস্তি এলাকার প্রায় ৩০০ মানুষের তারা খাবার তুলে দিয়েছেন। এবারের খাবারের তালিকায় ছিল বিরিয়ানি, জর্দা ও বিভিন্ন ধরনের ফল।

সেখানে খাবার খেতে এসেছিলেন মিজানুর রহমান নামের একজন ভিক্ষুক। তিনি বলেন, লকডাউনে ভিক্ষা করতে কোথাও বের হতে পারি না। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে দিন পার করছি। এখানে অন্তত একবেলা ভালো খাবার খেয়েছি। এটা অনেক বড় পাওয়া।

‘হেল্প পিপল অর্গানাইজেশন’র প্রধান আল-রশিদ রাহি বলেন, গত বছর দেশে যখন করোনায় প্রথম লকডাউন দেওয়া হয়। তখন দেখি অনেক অসহায়, গরীব মানুষ না খেয়ে আছে। এই দৃশ্য দেখে আমার মনে হয় তাদের জন্য কিছু একটা করা প্রয়োজন। শুরুতে নিজের সামান্য টাকা দিয়েই সহায়তা শুরু করি। পাশাপাশি ফেসবুক প্রচার করি। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে সহায়তা পাই। এইভাবে তাদের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়।

এছাড়া জন্মদিন ও বিয়ে বড়িতে খাবার বেঁচে গেলে তা নষ্ট বা ফেলে না দিয়ে কেউ আমাদের নম্বরে ফোন দিয়ে জানান। আমাদের সদস্যরা গিয়ে সেই খাবার সংগ্রহ করে। তারপর তা পৌঁছে দেওয়া হয় সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে।

ইউকে/এএস