নিজস্ব প্রতিবেদক: তীক্ষ্মধার কাটারির আঘাতে শক্ত খোলস থেকে বেরিয়ে আসছে সরস কচি তালের শাঁস। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে গলাটা একটু ভেজাতে পথচারীরা ভিড় করছেন তালশাঁস বিক্রেতার কাছে।
সুস্বাদু তালশাঁস খেয়ে দিনমজুর থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা প্রশান্তির পরশ নিয়ে দূর করছেন তাৎক্ষণিক ক্লান্তি। আবার কেউ কেউ নিজের পরিবারের জন্যও নিয়ে ঘরে ফিরছেন।
রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর সদরগুলোর মোড়ে মোড়ে, ফুটপাত কিংবা হাট-বাজারে ঈদের পর থেকে মিলছে তালশাঁস।
তীব্র গরম চারদিকে। বাইরে বইছে লু হাওয়া। ঘর থেকে বের হলেই মনে হচ্ছে অগ্নিকুণ্ড! একেবারেই হাঁসফাঁস অবস্থা। তেষ্টায় যেন বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে পদ্মাপাড়ের মানুষের। এমন দিনে অল্প খরচে সহজেই প্রাণ জুড়াচ্ছে মৌসুমি তালশাঁস। হাতের নাগালেই আছে সতেজ কোমল, নির্ভেজাল রসে ভরা উপাদেয় তালশাঁস। মিষ্টি স্বাদের মোহনীয় গন্ধে ভরা তালের শাঁসের একটি টুকরো মুখে দিলেই রসে টইটম্বুর হয়ে উঠছে মুখ। আর এই দুর্মূল্যের বাজারেও কিন্তু দেশি তালের শাঁসের দাম রয়েছে সবার হাতের নাগালেই। মহানগরজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে এই সুস্বাদু রসালো ফলটি। প্রতিটি শাঁস বিক্রি হচ্ছে ৪/৫ টাকা দরে। তবে ক্রেতারা বলছেন, গত বছরগুলোর তুলনায় এবছর তালশাঁসের দাম বেশি।
আম ও লিচুসহ মৌসুমি অন্য ফলের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিষাক্ত ফরমালিন ব্যবহারের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু তালশাঁসে এসবের প্রয়োজন হয় না। ফলে ভেজালমুক্ত তালশাঁসের কদর বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।
মহানগরীর শালবাগান এলাকার তালশাঁস বিক্রেতা আব্দুস সালাম জানান, স্থানীয়ভাবে তালের শাঁসকে তালের চোখ বলা হয়। প্রতিবছর মধুমাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে পাইকারি দামে তালশাঁস কিনে এনে বিক্রি করেন। সেক্ষেত্রে গাছ থেকে পাড়া এবং বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজার পর্যন্ত আনা সব খরচই তাকে বহন করতে হয়। আর গাছ মালিককে তাল কেটে নামানোর আগেই টাকা পরিশোধ করতে হয়। আগাম গাছও কিনে রাখতে হয়।
বর্তমানে শালবাগান ছাড়াও মহানগরীর গোরহাঙ্গা রেলগেট, উপশহর, লক্ষ্মীপুর, সাহেববাজার, কোর্ট শহীদ মিনার, শাহ মখদুম কলেজের সামনে, বিনোদপুর, কাটাখালী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন ও ভদ্রা মোড়ে তালশাঁস বিক্রি হচ্ছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলছে কেনা-বেচা।
মহানগরীর সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া এলাকায় তালের শাঁস কিনতে আসা আরাফাতুল ইসলাম বলেন, লোভনীয় ফল তালশাঁস। খেতে অনেক ভালো লাগে। গত বছর প্রতিটি শাঁসের দাম ৩ টাকা ছিল। কিন্তু এবছর ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজশাহী কোর্ট শহীদ মিনার এলাকায় তালের শাঁস বিক্রেতা আবু রায়হান বলেন, মহানগরীতে তালের তেমন গাছ নেই। তাই তাল বিক্রি করতে হলে মহানগরীর বাইরের এলাকাগুলো থেকে আনতে হয়। তাল কেনা খরচ, বহন ও নিজের মজুরি মিলে খরচা বেড়ে যায়। তাই দাম একটু বেশি। একটি তিন চোখের পানিতাল ১৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর গ্রামাঞ্চলে বহন খরচের ওপর নির্ভর করে সেটি বিক্রি করা হচ্ছে ১০ টাকায়।
তালশাঁসের পুষ্টি উপাদান: প্রতি ১০০ গ্রাম তালশাঁসে রয়েছে ৮৭ কিলোক্যালরি, ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, জলীয় অংশ ৮৭.৬ গ্রাম, আমিষ শূন্য দশমিক ৮ গ্রাম, ফ্যাট শূন্য দশমিক ১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেটস ১০.৯ গ্রাম, আঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন শুন্য দশমিক ০৪ গ্রাম, রিবোফ্লাভিন শুন্য দশমিক ০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন শুন্য দশমিক ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম।
তালশাঁসের উপকারিতা: গরমের দিনে তালশাঁসে থাকা জলীয় অংশ শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে। প্রাকৃতিকভাবে দেহকে রাখে ক্লান্তিহীন। তালে থাকা ভিটামিন ‘সি’ ও ‘বি’ কমপ্লেক্স পানিপানের তৃপ্তি বাড়ায়। খাবারেও রুচি বাড়ে। এর ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে। এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
তালশাঁস বমিভাব আর বিস্বাদ দূর করতে ভূমিকা রাখে ও ত্বকের কোমলতা বাড়ায়। এটি লিভারের সমস্যা এ রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। তাল হজমে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় ও শরীরের দুর্বলতা কাটায়। এছাড়া তাল শাঁসের ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে দারুণ ভূমিকা রাখে।
ইউকে/এসই/এসএম