আড়াই ঘণ্টার পথ ১০ ঘণ্টায়!

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা: মহামারি করোনা ভাইরাস আতঙ্কের পাশাপাশি যাত্রাপথের সীমাহীন দুর্ভোগ। এ সব কিছুই যেন তুচ্ছ ঘরেফেরা মানুষের কাছে। বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য দুর্ভোগ পায়ে দলে, ভয়ংকর ব্যাধিকে তোয়াক্কা না করে বীরদর্পে ছুটে চলেছেন তারা।

সোমবার (১৯ জুলাই) রাত দেড়টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় যাত্রাবিরতিতে থাকা একটি পিকআপভ্যানে এমনই কয়েকজন ঘরেফেরা যোদ্ধার সঙ্গে কথা হয়।

মৌসুমি খাতুন নামে এক গার্মেন্টস কর্মী আশুলিয়ার জামগড়া থেকে আসছিলেন। ২০ বছর বয়সী এ তরুণী বলেন, নীলফামারী জেলার জলঢাকায় তার বাড়ি। সেখানে দরিদ্র বাবা রয়েছেন। তাদের সঙ্গে ঈদ করার জন্যই ছুটে চলেছেন তিনি।

মমতাজ বেগম নামে একই জেলার ডিমলা উপজেলার গৃহবধূ তার শ্বশুর-শাশুড়ি এবং বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে ঈদ করবেন।

রফিকুল ইসলাম নামে একই এলাকার টেক্সটাইল মিলের শ্রমিক স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দেশের বাড়ি ফিরছেন। তিনি তার বাবা-মা ও ভাইদের সঙ্গে ঈদ করবেন এবং সবাই মিলে কোরবানি দেবেন বলে জানান।

সামিউর রহমান নামে নীলফামারী সদরের বাসিন্দা এক রিকশাচালক বলেন, ঢাকায় সারা বছর রিকশা চালাই। যতই কিছু হোক না কেন বছরে দুই ঈদে দেশের বাড়ি যাবোই।

মুক্তা খাতুন নামে গার্মেন্টসকর্মী বলেন, ঈদের আনন্দ যদি আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি না করতে পারি, তাহলে ঈদকে ঈদই মনে হয় না।

ওই পিকআপভ্যানে গাদাগাদি করে অন্তত ৩০ জন যাত্রী বসেছিলেন। কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

পথের দুর্ভোগের বিবরণ দিতে গিয়ে ঘরে ফিরতে থাকা শ্রমজীবী এ মানুষেরা আরও বলেন, তাদের কেউ কেউ আশুলিয়া, আবার কেউ জামগড়া ও বাইপাইল থেকে পিকআপে চড়েছেন। বাসে ভাড়া বেশি হওয়ায় টাকা বাঁচাতে তারা খোলা পিকআপে চেপেই রওনা হয়েছেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে রওয়ানা দিয়েছেন। রাত দেড়টার দিকে সিরাজগঞ্জে এসে পৌঁছাতে পেরেছেন। পথে পথে যানজটের কারণে আড়াই ঘণ্টার পথ আসতে ১০ ঘণ্টা সময় লেগেছে। আরও অন্তত দুশো কিলোমিটার পথ পারি দিতে হবে তাদের। পুরো যাত্রাপথে কখনো টানা রোদ আবার কখনো বৃষ্টির স্বাদও পেয়েছে নিম্ন আয়ের এ মানুষগুলো।

দুর্ভোগের বোঝা মাথায় নিয়ে আসা এসব যাত্রীরা বলেন, ঢাকায় কার সঙ্গে ঈদ করবো? ওখানে শুধু কাজের জন্য থাকা। আত্মীয় পরিজন তো সব নিজের নিজের এলাকায়। তাদের ছেড়ে ঈদকে পানসে মনে হয়। তাছাড়া আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে কোরবানি দেওয়ার মজাই আলাদা।

তাই যত কষ্টই হোক বাড়ি যেতেই হবে। বাড়ি গিয়ে বাবা, মা ভাইসহ নিজের লোকজনকে দেখলে পথের সব কষ্ট ঘুচে যায়।

পিকআপভ্যান চালক শাহীন আলম বলেন, যাত্রীদের মধ্যে সবাই নীলফামারী জেলার বাসিন্দা। এদের কাছে ৭/৮শ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। বাসের ভাড়া ১২শ থেকে ১৫শ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সেখানে আমরা ৭/৮শ করে নিচ্ছি। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, যানবাহনের প্রচুর চাপ। বাসের পাশাপাশি কিছু ট্রাকেও যাত্রী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে কোথাও বড় ধরনের যানজট সৃষ্টি হয়নি।

ইউকে/এএস