ঈদ শেষ, ঢাকামুখী মানুষের স্রোত

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: বৃহস্পতিবার ঈদুল আযহার দ্বিতীয় দিন। করোনার পরিস্থিতি মধ্যে ঈদের ছুটিতে ‘লকডাউন’ শিথিল থাকায় অনেকে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে গিয়েছিলেন।

তবে ঈদের তৃতীয় দিন শুক্রবার থেকে সারাদেশে আবারও কঠোর ‘লকডাউন’ চালু হতে যাচ্ছে। এরজন্য ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া মানুষগুলো আবার ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে।

পরিবার-পরিজন নিয়ে আবারও তারা ফিরছেন ঢাকা নগরীতে। কোরবানির মাংস বোঝাই ব্যাগ হাতে-ঘড়ে ও মাথায় নিয়েও অনেকে ফিরছেন। তবে ঢাকা ফেরত মানুষরা বলছেন গত ঈদের মত এবার ফেরার পথে পরিবহনের ভোগান্তি সামান্য কমেছে। কারণ রমানের ঈদে তো গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। রাস্তায় যানবাহনের জটলা সব সময়ে থাকে ঈদে একটু বেশি থাকে বলছেন অনেকেই।

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর ও উত্তরা এলাকায় ঢাকামুখী মানুষের আনাগোন বাড়তে শুরু করেছে। এসব এলাকার সড়কগুলো ঈদের দ্বিতীয় দিনেই অনেকটা ব্যস্ততম হয়ে উঠেছে। মানুষজন তাদের ব্যাগ নিয়ে ফিরছেন। তবে প্রত্যেকের সঙ্গে কোরবানির মাংস বোঝাই ব্যাগ থাকতে দেখা গেছে। অনেকে মাংসের ব্যাগ বালটিতে বসিয়ে বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরছেন। অনেকেই বাস থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড ও টঙ্গী বাস স্ট্যান্ড নেমে পায়ে হেটে অথবা অটোরিকশায় করে আব্দুল্লাহপুর আসছেন। আবার কিছু পরিবহন সরাসরি আব্দুল্লাহপুর এসে থামছে। এদিকে দুর্পাল্লার গণপরিবহণগুলো সরাসরি চলে যাচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন টার্মিনালে বা আব্দুল্লাহপুর বাস কাউন্টারে। সেখানে যাত্রীদের নামতে দেখা গেছে।

এদিকে সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর দেখা গেছে। তবে অন্যান্য দিনের মতই তাদের তৎপরতা রয়েছে স্বাভাবিক।

মো. রাফসান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গত ঈদে (ইদুল ফিতর) ছুটিতে তিনি বাড়ি যেতে পারেন নি। পরিবার নিয়ে ঢাকায় ঈদ উদযাপন করেছিলেন। তবে এবার কোরবানির ঈদে (ইদুল আযহা) ছুটিতে পরিবার নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, প্রতিবারই আমরা বাড়িতে গরু কোরবানি করি। কোরবানির ঈদে বাড়ি গিয়ে সবাই একসঙ্গে আনন্দ উদযাপন করেছি। শুক্রবার থেকে আবার কঠোর ‘লকডাউন’ শুরু হচ্ছে। কারণ ‘লকডাউন’ পরে গেলে বাড়িতে ১৪ দিন আটকে থাকতে হবে। তাই আগেই চলে এসেছি।

রাজধানীর রামপুরায় কনফেকশনারি দোকানি মজিবুর রহমান ঈদের আগে তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল গিয়েছিলেন। ঈদের পরদিন সকালেই তিনি মাংসের ব্যাগ নিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন। আব্দুল্লাহপুর বাস স্ট্যােন্ড দাঁড়িয়ে ছিলেন বাড্ডা-রামপুরার বাসের অপেক্ষায়। তিনি বলেন, সব সময় বাড়িতে আমরা তিন ভাই মিলে কোরবানি দেই। এবারও দিয়েছি। তবে এবার ঈদে পরিবারকে ঢাকায় রেখেই বাড়ি গিয়েছিলাম। আজ কোরবাসির মাংস নিয়ে ঢাকায় ফিরছি। ‘লকডাউনে’ যাতায়াতের কষ্ট বলে আমি একাই গিয়েছিলাম।

অনেকে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ কাটিয়ে ঢাকায় ফিরছেন। কেউ আবার পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন। সবাই কঠোর ‘লকডাউন’র আগেই ঢাকামুখী হচ্ছেন।

এর আগে বুধবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ঈদের মধ্যে বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল। সব শ্রেণির মানুষ সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পেরেছেন। পশুর হাটগুলোতে ভালোভাবে কোরবানির পশু কিনতে পেরেছেন। যারা ঈদের আগে ঢাকা এসেছিলেন তারাও সুন্দর পরিবেশে ঈদের পরদিনের মধ্যে বাড়ি ফিরতে পারবেন।

তবে ঈদের তৃতীয় দিন থেকে অর্থাৎ ২৩ জুলাই থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিনের বিধি-নিষেধ শুরু হচ্ছে।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আগামী ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই সময়ে সরকারি ও বেসরকারি অফিস, শিল্প কারখানাসহ সারাদেশে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

উল্লেখ্য, ১ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহ শেষে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার গত ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে। তবে খাদ্য ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন/প্রক্রিয়াকরণ মিল-কারখানা এবং কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিধিনিষেধের বাইরে থাকবে। এছাড়া ওষুধ, অক্সিজেন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্পও বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখা হবে।

ইউকে/এএস