বাগেরহাট সংবাদদাতা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টিতে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার অর্ধলক্ষ পরিবার। ভেসে গেছে দুই সহস্রাধিক মাছের ঘের।
পানিবন্দি পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি কাঁচা-পাকা সড়কও ডুবেছে বৃষ্টির পানিতে। রাতের আচমকা বাতাসে উপড়ে পড়েছে কয়েক হাজার গাছ। বর্ষাকালীন সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে হাঁটু পানি জমে গেছে।
বৃহস্পতিকবার (২৯ জুলাই) সকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার খানজাহান পল্লী গোবরদিয়া, কাড়াপাড়া, নাগেরবাজার, শাহপাড়া, হাড়িখালি-মাঝিডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বাগেরহাট শহরের বেশ কয়েটি সড়কের ওপর এক থেকে দেড় ফুট পানি দেখা যায়। বৃষ্টির পানিতেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উপযুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বাগেরহাট শহরের এ অবস্থা বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
অন্যদিকে শরণখোলার খুড়িয়াখালী, সাউথখালী, কচুয়ার নরেন্দ্রপুর, চন্দ্রপাড়া, রাড়িপাড়া, পদ্মনগর, ভান্ডারকোলা, মোরেলগঞ্জ পৌরসভা এলাকা, শানকিভাঙ্গা, চিংড়াখালীসহ অসংখ্য এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত। এসব এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। তারা না পারছেন বাইরে যেতে, না পারছেন রান্না করে খেতে। ভেসে যাওয়া ঘেরের মাছ বাঁচাতে বৃষ্টিতে ভিজে শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন মাছ চাষিরা।
রামপাল উপজেলার পেরিখালি এলাকার মোতাহার হোসেন বলেন, দু’দিনের বৃষ্টিতে এলাকার মানুষের ঘের-পুকুর সব তলিয়ে গেছে। নেট ও মাটি দিয়েও রাখা যায়নি। বন্যায়ও এত পানি দেখা যায় না।
বাইনতলা এলাকার মোহসিন বলেন, বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ি-ঘরে পানি জমে গেছে। আমার পাঁচ বিঘা ঘেরের মাছ বের হয়ে গেছে। সবজিরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপকভাবে।
রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কবির হোসেন বলেন, বুধবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে আকস্মিক ঝড় হয়। এতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১০টি কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি।
বাগেরহাট সদর উপজেলার চুলকাঠি এলাকার সাইদুল মীর বলেন, বৃষ্টিতে ঘেরের পার এবং ভিটায় সব জায়গায় পানি উঠে গেছে। শসা, ঢেঁড়স, পেঁপে, লাউসহ সব ধরনের সবজির গোড়ায় পানি রয়েছে। এভাবে দুই-একদিন থাকলে গোড়া পচে গাছ নষ্ট হয়ে যাবে।
শরণখোলা উপজেলার ভোলা নদীর চরের অবস্থিত গুচ্ছগ্রামের আব্দুল মালেক, আব্দুল খালিক, আব্দুল কুদ্দুস, সাইদুল শিকদারসহ কয়েকজন বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকেই পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছি। রান্না বন্ধ। শুকনো খাবারেই চলছে আমাদের দু’দিন।
শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন, আম্পান ঘূর্ণিঝড়কে হার মানিয়েছে এ বৃষ্টি। এতো বেশি পানিবন্দি মানুষ একসঙ্গে কখনও দেখিনি।
কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর মোল্লা মোতাহার বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমাদের এলাকার অনেক ঘর বাড়ি ডুবে গেছে। গাছপালা পড়েছে অনেকের। ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পদ্মনগর থেকে নরেন্দ্রপুর যাওয়ার রাস্তাটিও ডুবে গেছে। খুবই সমস্যায় পড়েছি আমরা।
এদিকে শরণখোলা উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাতুনে জান্নাত।
ইউএনও খাতুনে জান্নাত বলেন, শরণখোলা উপজেলার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। লোকালয়ের পানি নামানোর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, শুধু আমার উপজেলায়ই ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। উপজেলার অন্তত ৯০ শতাংশ জায়গা এখন পানির নিচে রয়েছে। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পানিবন্দি মানুষের কাছে যাচ্ছি। তাদের শুকনো খাবারও দিচ্ছি। তবে পানিবন্দি লোকদের আরও বেশি সহযোগিতার প্রয়োজন।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর ও কচুয়ার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধলক্ষ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেষ দেওয়া হয়েছে।
ইউকে/এএস