লকডাউনের অষ্টম দিনেও ঢাকায় ফিরছে মানুষ

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: ‘বাড়িতে আর কত দিন থাকুম (থাকবো) সেই কোরবানির ঈদের আগে গেছিলাম মাইয়া- পোলা নিয়া। ঈদের পরই লকডাউন শুরু হইলো। আটকা পড়ছিলাম ঢাকায় আইতে পারি নাই। দোকানও খোলা হয় নাই। তাই ঈদের এক সপ্তাহ পর বাস, রিকশা ভ্যানে কইরা আজ ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা ঢাকায় আইলাম।’

শুক্রবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর প্রবেশ মুখ আব্দুল্লাহপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা ফেরত যাত্রী আনিসুর রহমান কথাগুলো বলছিলেন।

তার গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নকলায়। পরিবার নিয়ে ঈদের আগের দিন তিনি গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। ঢাকার দক্ষিণখানে একটি চা-পান বিক্রির দোকান রয়েছে তার।

আনিসুর রহমান বলেন, কোরবানির ঈদ বাড়িতে করি প্রতিবার। গতবছর যাই নাই। তাই এবার গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময় শুনছিলাম লকডাউন ঈদের পর বেশি কড়া থাকবে না। কিন্তু ঈদের তিনদিনের দিন থেকেই কড়া লকডাউন শুরু হয়। তাই পরিবার নিয়া আসি নাই। বাড়িতে বইসা থাকতে আর ভালো লাগে না। এদিকে দোকান না খুললে পড়ে খামু কি। তাই এক সপ্তাহ থাইকা আজ ঢাকায় আইসা পড়লাম।

তিনি বলেন, এদিকেও একই অবস্থা। বাড়িওয়ালা দুই দিন ফোন করছিলো। গত মাসের ভাড়া বাকি আছে। তাই চইলা আসলাম।

এদিকে গত ৯ দিন আগে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের পরদিন অনেকেই ঢাকায় ফিরে আসলেও অনেকে আসতে পারেননি। তবে নয়দিন পর আজ শুক্রবার (৩০ জুলাই) সকাল থেকেই রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে ঢাকা ফেরত যাত্রীদের ফিরতে দেখা গেছে।

লকডাউন চলছে তাই টঙ্গী থেকে অনেকে হাতে ও ঘাড়ে করে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছেন আব্দুল্লাহপুর। সেখানে অনেকেই রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ আবার ভ্যানে বসে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে ব্রিজের দুই পাশে পুলিশের দুটি চেকপোস্ট রয়েছে। একটি ঢাকার প্রবেশ মুখে অন্যটি ঢাকা থেকে গাজীপুর যেতে। দুটি চেকপোস্টেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগ ও ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এই দুটি চেকপোস্টই উত্তরার দুটি থানার (উত্তরা পূর্ব থানা ও উত্তরা পশ্চিম) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।

এ দুটি চেকপোস্টে যানবাহন তল্লাশি করছেন পুলিশ সদস্যরা।
চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে যানবাহনের চাপ অনেকটা কম থাকলেও টঙ্গীর ওপার থেকে অনেক মানুষ হেঁটে ঢাকায় ঢুকছেন। তবে এদের সংখ্যাও কম। এই চেকপোস্টে জনমানুষের অহেতুক চলাচলের বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হচ্ছে।

উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে টঙ্গী যাচ্ছিলেন রহমতুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি। আব্দুল্লাহপুরে উত্তরা পশ্চিম থানার আওতায় থাকা চেকপোস্টে তার পথরোধ করেন পুলিশ সদস্যরা। বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি পুলিশকে জানান, তার পোষা কবুতরের খাবার কিনতে তিনি টঙ্গী বাজারে যাচ্ছেন।

পরে পুলিশ সদস্যরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন এটা কি জরুরি কাজ? এতে তিনি উত্তরে বলেন, আমাদের ক্ষুধা লাগলে আমরা খাই স্যার কবুতরেরও তো ক্ষুধা আছে। আমি বাড়িতে কবুতর পালি তাই ওদের খাবার কিনতে যাচ্ছিলাম। এ কথা শুনে পথচারী রহমতুল্লাহকে ছেড়ে দেন পুলিশ সদস্যরা।

চেকপোস্টে দায়িত্বরত উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিয়াজ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, লোকটির পথরোধ করে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি সত্য কথা বলেছেন। তিনি আমাদের জানান কবুতরের খাবার কিনতে যাচ্ছেন। তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের এই এসআই বলেন, শুক্রবার তাই যানবাহন অনেক কম। আমরা এখানে যানবাহন তল্লাশি ছাড়াও সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়টিও দেখছি। সবাই যাতে মাস্ক পরেন এবং অহেতুক কারণে বের না হন সে বিষয়ে আমাদেরও নজরদারি রয়েছে।

যারা অহেতুক কারণে যানবাহন নিয়ে বের হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা ডিউটি করছি, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি। তবে জনমানুষ ও পথচারীদেরও দায়িত্ব সচেতনতার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।

এদিকে রাজধানীর বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বনানী ও মহাখালী এলাকায় সড়কে যানবাহনের চলাচল অনেকটাই কম দেখা গেছে।

কঠোর লকডাউনের অষ্টম দিন চলছে আজ। এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। আক্রান্তদের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চললে এব সংক্রমণের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাই সবাইকে নিজের জন্য পরিবারের জন্য হলেও সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা।

ইউকে/এএস