প্রতিদিন রেকর্ড গড়ছে ডেঙ্গু

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিনই। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৯৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ বছর এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল যে ১৯৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তার মধ্যে ১৮১ জনই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং বাকি ১৩ জন ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৪২। এর মধ্যে ঢাকাতেই রয়েছে ৬১৮ জন। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ২৯ জুলাই সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে মোট দুই হাজার ২৯২ জন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে এক হাজার ৬৪৬ জন।

এই বছরের সর্বাধিক এক হাজার ৯২০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে শুধু জুলাই মাসেই, যা এ বছর মোট আক্রান্তের ৮৩.৭৭ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে, ডেঙ্গুই তাদের মৃত্যুর কারণ কি না, তা নিশ্চিতের জন্য তাদের তথ্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু কয়েক বছর আগে ঢাকায় বড় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছিল। গত বছর করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর ডেঙ্গু আড়ালেই ছিল। তবে এ বছর আবার আক্রান্ত বাড়ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশা দমনে এরই মধ্যে অভিযান শুরু করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টার সময় ১০ মিনিট ধরে নিজের ঘর পরিষ্কার করতে ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। গতকাল সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর মগবাজার মোড়ে এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে মশক নিধনের চিরুনি অভিযান এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিদর্শনের সময় তিনি এই আহ্বান জানান।

মেয়র আতিক বলেন, ‘নিজেদের বাসাবাড়ির ফুলের টব, অব্যবহৃত টায়ার, ডাবের খোসা, বিভিন্ন ধরনের খোলা প্যাকেট বা পাত্র, ছাদ কিংবা অন্য কিছুতে যেন তিন দিনের বেশি পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আমাদের নিজেদের ঘরবাড়ি ও আশপাশের পরিবেশকে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমেই এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ করতে পারব।’ বক্তব্যের সময় তিনি নগরবাসীকে ‘তিন দিনে এক দিন, জমা পানি ফেলে দিন’ এই প্রতিপাদ্য মনে করিয়ে দেন।

আতিকুল ইসলাম বলেন, “নগরবাসীর কল্যাণে আমাদের ৪৪টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই বিনা মূল্যে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া নাগরিক সেবায় আমাদের ‘সবার ঢাকা’ মোবাইল অ্যাপস এবং জরুরি সেবা নম্বর ৩৩৩ নম্বর চালু রয়েছে।” এ সময় আতিকুল ইসলাম মাস্ক পরা এবং করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন।

চিরুনি অভিযানের অংশ হিসেবে গতকাল মগবাজার এলাকার নয়াটোলা বদ্ধ গলি এবং বড় মগবাজারে উত্তর সিটির মশককর্মীরা ওষুধ ছিটান। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচজনের ১০টি টিম ওষুধ ছিটানোর কাজ করছে। পাঁচজনের প্রতি টিমে দুজন মেশিনধারী মশককর্মী এবং তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেন। মগবাজার রেলগেটে বসে কথা হয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী সাজেদা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকালে বাংলামোটর এলাকা ঝাড়ু দিছি। এরপর ১০টা থেইক্যা এইহানে ঔষধ দিতে আইছি। ১২টা পর্যন্ত এই কাম করমু।’ এই এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হয় বলে জানালেন এলাকাবাসী। শেফালি নামে এলাকার এক স্থায়ী বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে তিন-চার দিন পরপরই মশার ওষুধ দিতে আসে। তবে মশা কেন বাড়ছে তা জানি না।’

বর্তমানে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোধে ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলের ৫৪টি ওয়ার্ডে ২৭ জুলাই থেকে একযোগে ১০ দিনব্যাপী মশক নিধনে চিরুনি অভিযান এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শুক্রবার ছাড়া এই অভিযান চলবে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত। গতকাল মশক নিধন কার্যক্রমে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান এবং স্থানীয় কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

ইউকে/এএস