বরিশাল সংবাদদাতা: বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের প্রবেশ পথে স্বজনদের জটলা। তাও আবার অক্সিজেনের জন্য। এই জটলা নিত্যদিনের। বেলা ১১ টার দিকে জটলায় যে কারো চোঁখ আটকাবে। স্বজনদের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছে অক্সিজেন সংকটের কথা। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছেন, সংকটে নেই।
করোনায় ওয়ার্ডের প্রবেশ পথের পশ্চিম দিকের বিশাল সিলিন্ডার (ট্যাংক) দেখে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আপনিও বললেন, সত্যিই সংকট নেই। কিন্তু যখন জানবে বিশাল সিলিন্ডার তৈরির পর থেকে আজ পর্যন্ত ওই সিলিন্ডারে অক্সিজেন আসেনি। তখন বুঝবেন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ততটা জোরালো নয়। যদিও পরিচালক বলছেন, ১০ হাজার লিটারের সিলিন্ডারে অক্সিজেন রিফিলের প্রক্রিয়া তারা প্রায় চুড়ান্ত করে ফেলেছেন। তাতেও ভরসা পাচ্ছেন না স্বজনরা।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইন পর্যাপ্ত নয়। শেষ ভরসা অক্সিজেন সিলিন্ডারও পাওয়া যায় না সময়মতো। রিফিলের দরের কারনে এখনো চালু হয়নি নতুন স্থাপিত অক্সিজেন ট্যাংক। করোনায় গুরুতর রোগীর জন্য জরুরি ভিত্তিতে হাইফ্লো অক্সিজেন প্রয়োজন হলেও আইসিইউ বেড একবারেই সীমিত।
যদিও পরিচালক বলছেন, অক্সিজেনের সংকট নেই। তবে হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগীর জন্য আগাম নাম লিখিয়ে, লাইন দাড়িয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিতে হয়। অনেকের ভাগ্যে সময় মত সিলিন্ডার জোটেও না।
শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ৩০০শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু করোনা ইউনিটে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি থাকছে সবসময়ই বেশি। যেখানে আইসিইউ শয্যা মাত্র ২২টি। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন আছে ১০৭টি বেডে। বাকিদের নির্ভর করতে হয় সিলিন্ডারের ওপর। তাও পাওয়া যায় না সময়মত। প্রতিদিন সকালে রোগীর স্বজনরা করোনা ওয়ার্ডের প্রবেশ পথে ভীড় করেন সিলিন্ডারের জন্য। তারা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আসেন। তখন রোগীর স্বজনদের অভিব্যক্তির মধ্যে সংকটের বিষয়টি ফুটে ওঠে। অনেকেই অভিযোগ করেন, তারা সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার পান না।
জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে হাসপাতালে অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করা হয়। তরল অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এক্সপেকট্রার সাথে রিফিল করার জন্য চুক্তি করতে হাসপাতাল পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু অন্য কম্পানির তুলনায় অক্সিজেনের দাম বেশি চাইছে এই প্রতিষ্ঠানটি। চড়া দামে এক্সপেকট্রাকে কাজ দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অযচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেছেন একটি সুত্র। তবে এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলছেন না।
সুত্রটি বলছে, ১০ হাজার লিটারের অক্সিজেন ট্যাংক প্রতিবার রিফিলের জন্য ২৫ হাজার ও পরিবহন বাবদ ১৪ হাজার টাকা দর দিয়েছে এক্সপেকট্রা। বিপরীতে রিফিলে ১৪ হাজার ও পরিবহন বাবদ ২ হাজার টাকা দর দিয়েছে অপর একটি অক্সিজেন সরবরাহ কম্পানি ‘লিনডে’। দর জটিলতার কারনে ট্যাংকে অক্সিজেন আসছে না।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, অনেকেই মনে করে আমার যদি হঠাৎ করে অক্সিজেন শেষ হয়ে যায় তাহলে আমি কোথায় যাবো। এমন আতঙ্কের কারণে মনে হয় যে সংকট আছে। কিন্তু, আমরা সবাইকে এই নিশ্চয়তা দিয়েছি যে যার যখন প্রয়োজন হবে তখন তিনি অক্সিজেন পাবেন।
হাসপাতালের পরিচালক জানান, আরো ৫০ টি বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন দেয়ার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া খুব দ্রুত শুরু হচ্ছে।
পরিচালক আরো বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৩০০টি সিলিন্ডার সাত থেকে আটবার রিফিল করতে হচ্ছে। তবে ১০ হাজার লিটারের একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার (ট্যাংক) প্রস্তুত থাকলেও অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পরিবহন দাম নিয়ে দর-কষাকষিতে এখনও তা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
ইউকে/এএস