নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদও দফায় দফায় বাড়ছে। কিন্তু যেভাবে ‘লকডাউন’ বাড়ছে সেভাবে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না কর্মহীন জনগোষ্ঠীর কাছে। দীর্ঘ ‘লকডাউনে’ কর্ম হারিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
‘লকডাউনের’ ফলে রাজশাহীতে দারিদ্রের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। এসব মানুষের জীবন জীবিকা চালিয়ে নেওয়ার স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে দেশের বেশিরভাগ দারিদ্র্য মানুষের ডাটাবেজ না থাকায় সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে। এই দারিদ্র জনগোষ্ঠী আগামীর অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবেন বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেমে) এক জরিপে উঠে এসেছে রাজশাহী বিভাগের দারিদ্র্যের হার। জরিপ অনুসারে ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২১ সালে দারিদ্র্যের হার দেখা যায় ৫৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০১৯ সালে সরকারি হিসেব অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রভাবে আয় কমে যাওয়া ও চাকরিচ্যুতির ফলে রাজশাহী দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
‘লকডাউনের’ মধ্যে সংসার চালানোর জন্য কাজ খুঁজতে রাজশাহী মহানগরে এসেছিলেন পবা উপজেলা কালাম আলী। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারে চার জন সদস্য। প্রতিদিনের কাজের টাকা দিয়ে সংসার চলতো। দীর্ঘ ‘লকডাউনে’ কাজ বন্ধ। তাই নতুন কাজের খোঁজ করছি। কাজ না থাকলে কি করে চাল কিনবো? পরিবারের সবাই কী খাবে এই চিন্তায় আছি। ’
শ্রমজীবী আনোয়ার আলী বলেন, ‘সংসারে আমিই একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই কাজ নেই। রোজই শ্রমের হাটে আসি। কিন্তু কাজ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাই। লকডাউনে সরকার নাকি সহায়তা দিচ্ছে? কিন্তু আমি কিছু পাইনি। আবার কারো কাছে চাইতেও পারি না। আগে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে কাজ করতাম। এখন গ্রামে কেউই কাজের জন্য ডাকে না। তাই বাধ্য হয়েই কাজের সন্ধানে রোজ শহরে আসি। ’
এদিকে দারিদ্র্যতা হার বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, কঠোর বিধিনিষেধের ফলে বেশিরভাগ মানুষের আয় কমেছে ও কর্ম হারিয়েছে। রাজশাহীতে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রোধে ‘দীর্ঘ লকডাউনে’ দারিদ্র্যের হার দেশের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে রাজশাহীতে বেড়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি ও ‘লকডাউন’ সফল করার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর সঠিক ডাটাবেজ না থাকায় সরকারি ত্রাণের বরাদ্দেও বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকে প্রয়োজনের বেশি ত্রাণ পাচ্ছে আবার অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আঞ্চলভিত্তিক দরিদ্র্য সীমার নিচের মানুষদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। যাতে সরকারি সহায়তা থেকে কেউ বঞ্চিত না হয়। ফলে তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা করলে ‘লকডাউন’ অনেকটা সফল হবে। কঠোর বিধিনিষেধের সময় অনুসারে দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের সহায়তা দিতে হবে।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষরা সঞ্চয় ভেঙে ও ঋণ করে জীবনযাপন করছে। ফলে তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা না করলে ভবিষ্যত অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
ইউকে/এএস