রাজশাহীর আমের বাজারদর যেন আকাশছোঁয়া!

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে আমের মৌসুমের এখন শেষ সময়। গত ১৫ মে থেকে আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হলেও বাজারে পর্যাপ্ত আম আসতে থাকে জুন মাসের শুরুর দিকে।

এখন মৌসুমের শেষের দিকে এসে আমের বাজারদর যেন আকাশছোঁয়া। ভালো জাতের আম বলতে আম চাষি, ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা বোঝেন হিমসাগর বা খিরসাপাত, গোপালভোগ, ল্যাংড়া এবং আম্রপালিকে। কিন্তু এরই মধ্যে রাজশাহীর বাজারে এসব আম নেই বললেই চলে।

আর অল্প কিছুদিন পরেই বাজার থেকে হারিয়ে যাবে মৌসুমের আম। শেষ সময়ে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এই ফল। রাজশাহীর বাজারে এখন মিলছে আম্রপালি, আশ্বিনা, ফজলি ও বারি-৪ জাতের আম। তবে আম্রপালি আছে একেবারে অল্প পরিমাণে। গোটা মৌসুমে বিভিন্ন জাতের আমের দাম কম থাকলেও এখন এই চার জাতের আমের দাম ব্যাপক চড়া। ফলে সাধারণ ক্রেতার হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে রাজশাহীর আম।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমের শেষে বাজারে আমের সরবরাহ না থাকায় প্রতি মণ আম বিক্রি হচ্ছে আগের দ্বিগুণ দামে। যেসব জাতের আম আছে সেগুলোও কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তাই শেষ মুহূর্তে হু-হু করে বাড়ছে রাজশাহীর সুস্বাদু সব আমের দাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, রাজশাহীতে এ বছর ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কৃষি বিভাগের ধারণা, উৎপাদন তার চেয়েও বেশি হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গুটি জাতের আম ১৫ মে, গোপালভোগ ২০ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা ও রাণীপছন্দ ২৫ মে, হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত ২৮ মে, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ নামানো শুরু হয়। এখন চারটি জাত ছাড়া বাজারে অন্য কোনো জাতের আম নেই। সব আমই প্রায় শেষ।

রাজশাহী মহানগরের শিরোইল বাসস্ট্যান্ড, সাহেব বাজার, লক্ষ্মীপুর, বিনোদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে মৌসুমী আম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ভালো জাতের আমের মধ্যে বাজারে অল্প পরিমাণ আম্রপালি আম আছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আম্রপালি ৮০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আশ্বিনা ৫০ থেকে ৮০, বারি-৪ ৯০ থেকে ১২০ এবং ফজলি ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি আড়তগুলোতে আম্রপালি ৬ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। আশ্বিনা ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০, বারি-৪ ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকা এবং ফজলি ৩ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, শেষ সময়ের দিকে আমের ভেতরে পোকা হয়ে যায়। বিশেষ করে ফজলি আমের এই সমস্যা। সেজন্য ব্যাগিং করা আমের চাহিদা বেশি। এসব আমের দামও বেশি। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় দীর্ঘ লকডাউনের কারণে এবার কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি আম চাষিরা। ফলে অনেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

বাগানে আর খুব বেশি আম নেই। সব আমই মোটামুটি নেমে গেছে। যেসব চাষি আশ্বিনা আমের চাষ করেছেন এখন দাম বাড়ায় পুরোপুরি না হলেও ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন তারা। শেষ মুহূর্তে এখন আশ্বিনাই ভরসা হয়ে উঠেছে রাজশাহীর বাজারে।

রাজশাহীর পুঠিয়ার বেলপুকুরের আম চাষি গোলাম মোস্তফা বলেন, করোনা আর লকডাউনের মধ্যে পড়ে এবারের মৌসুমে ৩ লক্ষাধিক টাকা লোকসান হয়েছে। এখন আশ্বিনা আম নামাচ্ছি। একটু দাম বাড়ায় পুরোপুরি না হলেও ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। কিন্তু আগেই যেসব চাষিরা আম বেঁচেছেন তাদের ক্ষতি কোনভাবেই কাটবে না।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, আম্রপালি, ফজলি আর বারি-৪ আম বড়জোর এক সপ্তাহ পাওয়া যাবে। তারপর এসব আমও শেষ হয়ে যাবে। এরপর শুধু আশ্বিনা আম পাওয়া যাবে আরও সপ্তাহখানেক। তাহলেই এ বছরের মতো আম শেষ হবে।

মহানগরীর শিরোইল বাসস্টেন্ড এলাকার মৌসুমী আম ব্যবসায়ী আবদুল মমিন বললেন, গতবছর কোরবানি ঈদের আগেই আম্রপালি আমের দাম উঠেছিল ২০০ টাকা কেজি। সেই তুলনায় দাম কমই আছে। তবে এবারের পুরো মৌসুম বিবেচনায় দাম বেশি।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আবদুল আউয়াল বলেন, বাগানে এখন শুধু কিছু আশ্বিনা আম আছে। সেই আমও খুব বেশি দিন থাকবে না।

করোনার প্রভাবে এবার আমের বাজার খারাপই ছিল। এখন দামটা একটু বেশি। যেসব বাগানমালিকের অন্য আমের সঙ্গে আশ্বিনাও ছিল, তাদের ক্ষতি কিছুটা কাটতে পারে বলে ধারণা করছেন এই কর্মকর্তা।

ইউকে/এএস