গ্রামে ৫জি সম্প্রসারণসহ ১০ প্রকল্পের অনুমোদন

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দিতে দেশজুড়ে ‘৫জি’ নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে সরকার। এ লক্ষ্যে ২ হাজার ২০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড (টিবিএল)।

মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। শেরেবাংলা নগরের মন্ত্রিসভা কমিটি পরিষদ (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।

বৈঠকে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হবে ৭ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা, প্রকল্প ঋণ থেকে এক হাজার ১৮৮ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৩৭ কোটি ব্যয় করা হবে।

এর মধ্যে সরকারের বর্তমানে শহরাঞ্চলে বিদ্যমান টেলিটকের ‘৪জি’ নেটওয়ার্ক ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যন্ত প্রসারিত করে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সুলভমূল্যে দ্রুতগতির ফোরজি ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সরকার ঘোষিত লক্ষ্য অনুসারে, ২০২১-২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটা গ্রামে ৫জি প্রযুক্তি নির্ভর মোবাইল সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড। চারটি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।

লক্ষ্যগুলো হলো—দেশের প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক প্রযুক্তির সেবার আওতায় আনা, দেশের প্রতিটি তরুণকে প্রযুক্তি জ্ঞান দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর, প্রতিটি সেবাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়ে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল নিশ্চিত করা হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। শহর-গ্রাম নির্বিশেষে দেশের সব মানুষ যেন আধুনিক প্রযুক্তি সেবার উপকারভোগী হয়, তা নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করছে সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ১০ কোটি জনগণ ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ হার গ্রামে বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামে ব্যবহারকারীদের ক্রয়ক্ষমতা অনেকাংশে কম, ব্যক্তিমালিকানাধীন অন্যান্য মোবাইল অপারেটররা এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ব্যবসায়িক ও মুনাফা বিবেচনায় নেটওয়ার্ক বিস্তারের মাধ্যমে মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা দিতে চায় না। ফলে গ্রামের মানুষেরা ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম হলো—৯ হাজার ৪১০ সেট টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম কেনা, তিন হাজার বিটিএস সাইট নির্মাণ, ট্রান্সমিশন হাবের জন্য ১০০ সাইট প্রস্তুতকরণ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কেনা, কাস্টমার কেয়ার ৩০ সাইট ও আসবাবপত্র কেনা।

সরকার ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী, আগামী ২০২১-২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৫জি প্রযুক্তিনির্ভর মোবাইল সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ। সূত্র জানায়, বর্তমানে টেলিটকের ভয়েস ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের কভারেজ অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় সীমিত। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে কভারেজ খুবই কম। টেলিটকের মোট টাওয়ার বা সাইট সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার। এর মধ্যে টু-জি বিটিএস যন্ত্রপাতি হলো সাড়ে চার হাজার, থ্রি-জি বিটিএস তিন হাজার ৬২টি এবং ফোর-জি বিটিএস এক হাজার ১০০টি। এই টাওয়ার ও টেলিকম যন্ত্রপাতির সংখ্যা অন্যান্য প্রতিযোগীর তুলনায় অত্যন্ত কম।

ইউকে/এএস