লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীন যাত্রীরা

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে তিন ধাপে দীর্ঘ ৩৮ দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার (১১ আগস্ট) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ৪৩টি নৌপথে শতভাগ যাত্রী নিয়ে নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে, যাত্রীদের লঞ্চে প্রবেশের সময় মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত ও হাতে জীবাণুনাশক দেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীন যাত্রীরা।

লঞ্চের ভেতরে ও নামার সময় যাত্রীদের মাস্ক পরা নিয়ে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। বুধবার (১১ আগস্ট) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ভোর ৬টা থেকে দেশের ৪৩ রুটে শতভাগ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল শুরু করেছে। এদিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া যাত্রীদের তুলনায় ঢাকা ফেরত আসা যাত্রীদের চাপ বেশি ছিলো।

এছাড়া লঞ্চগুলোতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কঠোর অবস্থানে থাকলেও উদাসীন যাত্রীরা। যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেলেও সঠিক নিয়ম মানছেন না কেউ। অনেকেই মুখের নিচে মাস্ক নামিয়ে রাখতে দেখা গেছে। টার্মিনালের মাইকে বার বার প্রচার করা হচ্ছে লঞ্চে প্রবেশের সময় যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক স্প্রেসহ যাত্রীদের মাস্ক নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, লকডাউন শেষে আজ ভোর থেকে বিআইডব্লিউটিএ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সদরঘাট থেকে শতভাগ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রচারণাসহ পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে টার্মিনালে। তারা মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতসহ লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে কিনা তা মনিটরিং করছে।

চাঁদপুরগামী লঞ্চ এমভি মিতালী-৫ এর মো. সাইদুর রহমান বলেন, আমরা সরকারের নির্দেশমতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ ছাড়বো। একইসঙ্গে মাস্ক ছাড়া যাত্রীদের লঞ্চে উঠতে দিচ্ছি না। লঞ্চের প্রবেশে যাত্রীদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করা হচ্ছে।

চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা রফ রফ-৭ এর যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লঞ্চটি ভোরে চাঁদপুর থেকে ৬টায় ছেড়ে আসার কথা থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রী হওয়ায় সাড়ে ৫টায় ছেড়ে দিয়েছে। লঞ্চটি প্রায় আড়াই হাজার যাত্রী নিয়ে এসেছে। লঞ্চের ভেতরে ও বারান্দায় তিল পরিমাণ জায়গা ছিলো না। অনেকেই মাস্ক পড়েনি। বার বার লঞ্চে কর্মীরা মাস্ক পরার জন্য মাইকিং করেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ভোর ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৮টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন রুট থেকে এসেছে মাত্র ৫টি লঞ্চ।

এদিকে রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আগামী ১১ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু খুলে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে চলবে সব ধরনের গণ-পরিবহন। তবে সড়কপথে স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক গাড়ি চলবে। এছাড়া দোকান-শপিং-মল খুলবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে।

করোনার সংক্রমণ রোধে গত ১ জুলাই থেকে বিধি-নিষেধ শুরু হয়। এ বিধি-নিষেধে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা ছাড়া সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে ঈদ উপলক্ষে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে নৌযান পরিচালনা করার অনুমতি দেয় সরকার। এসময় ভাড়াও ৬০ শতাংশ বেশি ছিল। ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আবারও বিধি-নিষেধ জারি হয়। এ দফায় জরুরি সেবা, গণমাধ্যম ও খাদ্য উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট পরিবহন ছাড়া সব ধরনের গণ-পরিবহনও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়।

ইউকে/এএস