বাগমারা সংবাদদাতা: বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ১৭টি সরকারি খাস পুকুর ইজারা নিয়ে একাই ভোগদখল করছেন- এক ইউপি চেয়ারম্যান। তার নাম মকবুল হোসেন। তিনি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
এছাড়া শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আছেন। তার বিরুদ্ধে উপজেলা ভূমি অফিসেও অভিযোগ জমা পড়েছে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আনা গুরুতর এই অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে- শ্রীপুর ইউনিয়নের চাইপাড়া মৌজার ১২টি এবং সাদোপাড়া মৌজায় আরও পাঁচটি পুকুর এবং সরকারি একটি বিল সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে ভোগদখল করছেন- শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন। সরকারি এই খাস পুকুরগুলো বিগত বছরগুলোতে গ্রামের মাদ্রাসা, মসজিদ এবং প্রকৃত মৎস্যজীবীরা মাছ চাষের জন্য ইজারা নেওয়া চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
এর ওপর পুকুরগুলো আগামী তিন বছরের জন্য আবারও তাকেই ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এই পুকুরগুলোর মধ্যে অনেকের পৈত্রিক সম্পত্তিও আছে। কিন্তু প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের দাপটে নিজেদের সম্পত্তিও ভোগ করতে পারছেন না কেউ কেউ। এ নিয়ে গ্রামের ভুক্তভোগী মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা এর প্রতিকার চেয়ে এর আগেও স্থানীয় ভূমি অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল পাননি। তাই শেষ পর্যন্ত এর একটা বিহিত করার জন্য আবারও ভূমি অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন। এর পরও যদি বিষয়টির সুরাহা না করা হয় এবং আবারও অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের নামে-বেনামে পুকুরগুলো ইজারা দেওয়া হয় তাহলে বাধা দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চাইপাড়া গ্রামের ফকির মাহমুদ মৃধার ছেলে শাহাদ আলী মৃধা। এই ভুক্তভোগীর অভিযোগ, চেয়ারম্যান মকবুল হোসেনের ১০/১২টি পুকুরের মধ্যে একটি পুকুরে তার পৈত্রিক সম্পত্তি আছে।
চাইপাড়ায় থাকা এই পুকুরে ৫৯ ডেসিমাল সরকারি খাস পুকুরের মধ্য তার ১৭ ডেসিমাল পৈত্রিক জমি ঢুকে গেছে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের ভয়ে তারা পুকুরে নামতে পারেন না। এ জন্য তিনি ভূমি অফিসেও অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কোনো সমাধান পাননি।
একই গ্রামের আরেকজন ভুক্তভোগীর নাম আজাদ আলী মোল্লা। তিনি চাইপাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি অভিযোগ করে বলেন- শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি খাস পুকুরগুলো লিজ নিয়ে নিজেই ভোগদখল করছেন। অথচ বিধান আছে লিজ গ্রহীতাকে অবশ্যই মৎস্যজীবী হতে হবে এবং একজন ব্যক্তি একাধিকবার সরকারি খাস পুকুর ইজারা নিতে পারবেন না।
অথচ সব নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানের নামে পুকুর ইজারা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে নিজেই ভোগদখল করে আসছেন। সরকারি এ পুকুরগুলো গ্রামের মাদ্রাসা, মসজিদ এবং প্রকৃত মাছচাষিরা ইজারা নেওয়া চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এর ওপর পুকুরগুলো আগামী তিন বছরের জন্য তাকেই আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
তার ভোগদখল করা পুকুরগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির নামও উল্লেখ করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। এর মধ্যে চাইপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, চাইপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মণ্ডলপাড়া ওয়াক্তিয়া মসজিদ ও হিন্দুপাড়া মন্দিরের নামে নেওয়া সরকারি খাস পুকুরগুলো লিজ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ভোগদখল করছেন বলেও অভিযোগ করেন- আজাদ আলী মোল্লা।
তবে এসব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন- বাগমারার শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন। তিনি বলেন- ‘এসব অভিযোগের সবই মিথ্যা। স্থানীয়রা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ধরনের অভিযোগ তুলেছেন। এই পুকুরগুলো স্কুলের নামে, মসজিদের নামে, মাদ্রাসার নামে ও মন্দিরের নামে রয়েছে। এগুলো থেকে পাওয়া অর্থ সংশ্লিষ্টরাই ভোগ করেন। আমি এর একটি টাকারও খোঁজ জানি না। আমার নিজ নামে কোনো পুকুর লিজ নেওয়া নেই।’
তবে চাইপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসবে একটি পুকুর আমার নামে লিজ নেওয়া আছে। কিন্তু সেই টাকাও আমি নেই না। যা আয় হয় তা স্কুলের উন্নয়নেই খরচ করা হয়। আমার নামে করা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এদিকে, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে- বাগমারা উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘হ্যাঁ, এমন একটা অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এখন আমরা যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে পুকুরগুলো লিজ দেওয়া হয়েছে তাদের প্রধানদের ডাকবো। তাদের কাছ থেকে আমরা শুনবো যে এই খাত থেকে আয় করা অর্থ প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয় করা হয় কী না। বিষয়টি এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (ইউএনও) অবগত করা হয়েছে। দু’দিন আগেই অভিযোগ এসেছে। আমরা আগামী সপ্তাহে এর শুনানি করবো। এতে অভিযোগের সতত্যা পাওয়া গেলে লিজ বাতিল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইউকে/জেডআর/এসএম