সূচকের রেকর্ডে পুঁজিবাজারে লেনদেন সাড়ে ১১ হাজার কোটি ছাড়াল

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: আগের সপ্তাহের মতো বিদায়ী সপ্তাহেও (৯-১২ আগস্ট) সূচকের উত্থানে পুঁজিবাজারের লেনদেন শেষ হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে সূচকের রেকর্ডে চার কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে ১১ হাজার ৬২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি এবং অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৪০৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

একইসঙ্গে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে বিএসইসির শক্তিশালী অবস্থানে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশে করোনা মহামারি চললেও অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে পুঁজিবাজার বলে মনে করেন তারা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মহামারির মধ্যেও এক দশকের মধ্যে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বর্তমান কমিশনের দক্ষ নেতৃত্বে করোনা মধ্যেও পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ছিল ইতিবাচক। শুধু তাই নয় ৫শ কোটি টাকার লেনদেন ২ হাজার ৫শ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এখনো অনেক কোম্পানির শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে। তাছাড়া বাজার নতুন কোম্পানি আসছে। একইসঙ্গে শেয়ারের সংখ্যাও বাড়ছে। সুতরাং আগামীদিনে লেনদেন ৩ হাজার থেকে চার হাজার কোটি টাকা ছাড়ানো এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তবে বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলছে। এ সময় বাজার নিয়ে কেউ যাতে নেতিবাচক মন্তব্য না করেন সেদিকে বিএসইসির নজর দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

অপরদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি ১৭ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৭ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৭ হাজার ১৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন ৩ হাজার ৬৪০ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার ৫১১ টাকা বা ৫২ শতাংশ বেড়েছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৯৯ পয়েন্টে। যা সূচকটি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করছে। প্রথমবারের মতো সূচকটি ছয় হাজার ৬৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার আগে ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করে সূচকটি। ওই দিন সূচকটি ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।

অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪১ পয়েন্ট বা ১৭৫ শতাংশ বেড়ে যথাক্রমে এক হাজার ৪৫৯ পয়েন্ট এবং দুই হাজার ৪২৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮২টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৮টির, কমেছে ১৭৮টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির শেয়ার ও ইউনিট দর এবং ৪টি কোম্পানির শেয়ারে কোন লেনদেন হয়নি

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৬ কোটি ১০ লাখ ৯৫ হাজার টাকায়।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৮ কোটি ৬৬ লাখ ৯১ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ৩ হাজার ৫৪২ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা বাজার মূলধন বেড়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেড়েছে।

গত সপ্তাহের লেনদেনের শুরুতে ডিএসইর পিই ছিল ১৯.৫৯ পয়েন্টে। যা সপ্তাহ শেষেও ১৯ দশমিক ৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও শূন্য দশমিক ৩১ পয়েন্ট বেড়েছে।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানি হলো- ওরিয়ন ফার্মা, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, মালেক স্পিনিং, জিপিএইচ ইস্পাত, অ্যাপোলো ইস্পাত, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইসলামিক ফাইন্যান্স।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৪০৮ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৬২ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২৩৪ কোটি ৩০ লাখ ৫২ হাজার ৪৭৫ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ১৭৪ কোটি ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭৮৭ টাকা বেড়েছে।

সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩২৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৫১৫ পয়েন্টে।

সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৭২টির দর বেড়েছে, ১৫৮টির কমেছে এবং ১০টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

ইউকে/এএস