বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখন থেকে করোনা টিকার ডাবল ডোজ গ্রহণকারী পাসপোর্টধারীদের ভারত থেকে ফেরার পর আর ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না। এ ছাড়া ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে লাগবে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র।
যাদের ডবল ডোজ টিকা নেওয়া হয়নি তাদের ভারত থেকে ফেরার পর ১৪ দিন থাকতে হবে হোম কোয়ারেন্টিনে। হোম কোয়ারেন্টিন সুবিধা নিতে যাত্রীদের সাথে রাখতে হবে টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের সনদ এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরটিপিসিআর থেকে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ। তবে দ্বিতীয় ডোজ না নেওয়া যাত্রীদের থাকতে হবে হোটেল কোয়ারেন্টিনে।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তে বেশ খুশি যাত্রীরা। এর আগে যাত্রীদের ব্যক্তিগত খরচে আবাসিক হোটেলে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন থাকতে হচ্ছিল প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। এতে অসহায় হয়ে পড়ছিলো যাত্রীরা।
জানা যায়, ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ভারতে যায় প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার যাত্রী। ভারত থেকেও ভ্রমণ, শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিদিন বাংলাদেশে আসে ৫ শতাধিক ভারতীয় নাগরিক। চলমান করোনা পরিস্থিতি অবনতি হলে গত ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার ভারত ভ্রমণে বিধি-নিষেধ জারি করে। এতে বন্ধ হয় ভারত যাত্রা। তবে শর্ত সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে সচল রাখা হয় মেডিক্যাল ভিসা। ভারত ফেরত যাত্রীদের দেশে ফেরা মাত্র ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন চালু করে।
দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি অবনতি হলে ভারত ফেরত যাত্রীদের গত ২৬ এপ্রিল থেকে বেনাপোলে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে শুরু হয়েছিল ব্যক্তিগত খরচে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন। এতে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে হাতে খরচের টাকা না থাকায় অনেকে সমস্যায় পড়ে। এ ছাড়া গুরুতর জটিল রোগে আক্রান্তরা হোটেল আর হাসপাতাল কোয়ারেন্টিনে অসহায় হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে টিকা গ্রহণকারী আর করোনা নেগেটিভ যাত্রীদের দাবি ছিল হোম কোয়ারেন্টিন। তবে প্রথম থেকেই ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে ছিলো না কোনো কোয়ারেন্টাইন নিয়ম।
ভারত থেকে আসা পাসপোর্টধারী যাত্রী আনারুল ইসলাম জানান, ভারতে যাওয়ার আগে তিনি টিকার ডাবল ডোজ গ্রহণ করেছিলেন। এখন ফিরে হোম কোয়ারেন্টিন সুযোগ পেয়েছেন।
ভারত থেকে আসা আনিছুর রহমান জানান, আমি এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়ে ভরতে যাই। এখন ফিরছি। কিন্তু হোম কোয়ারেন্টিনের সুবিধা পাচ্ছি না।
অপরদিকে ভারতগামী যাত্রী আশরাফ আলী জানান, ভারতে যেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র এনেছিলেন কিন্তু তা লাগেনি। ছাড়পত্র ম্যানেজ করতে তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আমি দুই ডোজ টিকা নিয়েই ভারতে যাচ্ছি। এ নিয়মে এখন তারা অনেকটা স্বাচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারবেন।
শার্শা উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেয়ে তারা রবিবার থেকে কার্যকর করেছেন। ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো ছাড়পত্র লাগবে না। শুধু ভিসা, দুই ডোজ টিকা আর করোনা নেগেটিভ সনদ থাকলে তারা যেতে পারবেন। ভারত থেকে ফিরে আসার সময় যাদের করোনা টিকার দুই ডোজ নেওয়া আছে তারা বাড়িতে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। তবে ফেরার আগে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুমতি লাগবে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব জানান, রবিবার ভারত থেকে ফিরেছেন মেডিক্যাল ভিসার ৯০ জন যাত্রী। এদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিন পাঠানো হয়েছে ১১ জনকে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে ৭৯ জনকে। ট্যুরিস্ট ভিসায় যাতায়াত আপাতত বন্ধ রয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বন্দরে কাজ করছেন উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
ইউকে/এএস