বিনোদন বিভাগ: দেশের সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকটক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে টিকটক বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে বাংলাদেশের সোশ্যাল প্ল্যাটফরমে টিকটক একতরফাভাবে জায়গা দখলের চেষ্টা করছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি প্রচুর পরিমাণে অনলাইন বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এমনকি ইউটিউব খুললেও সেখানে টিকটকের আধিক্য। আর এই অ্যাপটি বাংলাদেশে বন্ধ হতে যাচ্ছে।
বিগো লাইভ, পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেমসহ এ ধরনের ক্ষতিকর সব খেলা ও অ্যাপস অপসারণ এবং সব লিংক তিন মাসের জন্য বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই তালিকায় রয়েছে টিকটক ও লাইকি। বলা হচ্ছে- টিকটক, লাইকি অ্যাপস ব্যবহার করে দেশের শিশু-কিশোর এবং যুবসমাজ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন। আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেছেন। মানবাধিকার সংগঠন ‘ল অ্যান্ড লাইফ’ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছারের করা এক রিট আবদেনে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। বিবাদীদের প্রতি আইনি নোটিশ দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২৪ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গোলাম সরোয়ার পায়েল। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।
রুলে সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকটক, বিগো লাইভ, পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেম, লাইকিসহ এ ধরনের ক্ষতিকর সব খেলা ও অ্যাপস অপসারণ এবং সব লিংক অবিলম্বে বন্ধের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, ওই সব অ্যাপস ও গেমের মাধ্যমে কী পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে তা নিরূপণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, ওই অর্থ লেনদেনে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ক্ষতিকর গেমস ও অ্যাপস বিষয়ে তদারকি ও গাইডলাইন তৈরি করতে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, শিক্ষাসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি), বাংলাদেশ ব্যাংক, সব মোবাইল অপারেটর, বিকাশ ও নগদকে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিট আবেদনে ওই সব অ্যাপস ও গেমের আড়ালে শত শত কোটি টাকা পাচার ও লেনদেনে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। পাশাপাশি ক্ষতিকর গেমস ও অ্যাপস বন্ধে বিটিআরসিকে নিয়মিত সুপারিশ করতে প্রযুক্তিবিদ, শিক্ষাবিদ ও আইনজীবী সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, পাবজি এবং ফ্রি ফায়ারের মতো গেমসে বাংলাদেশের যুবসমাজ এবং শিশু-কিশোররা ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এসব গেমস যুবসমাজকে সহিংসতা প্রশিক্ষণের এক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। ফলে সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা, সংস্কৃতি বিনষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া টিকটক, লাইকি অ্যাপস ব্যবহার করে দেশের শিশু-কিশোর এবং যুবসমাজ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। সারা দেশে কিশোর গ্যাং কালচার তৈরি হচ্ছে। টিকটক অনুসারীরা বিভিন্ন গোপনীয় জায়গায় পুল পার্টির নামে যৌন কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে নারী ও অর্থপাচারের ঘটনায়ও টিকটক, লাইকি এবং বিগো লাইভের মাধ্যমে চলছে। যা দেশ ও জনস্বার্থের পরিপন্থী।
রিট আবেদনে আরো বলা হয়, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ বিধায় বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটর করা প্রয়োজন। অনৈতিক ওই সব গেমস থেকে রক্ষা করতে শিশুদের জন্য উপযোগী ও যথাযথ অনলাইন গেমস তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। ক্ষতিকর গেমস এবং অ্যাপস অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং উপযোগী সাইবার পদ্ধতি সুনিশ্চিত করতে সরকারের একটি কমিটি থাকা প্রয়োজন।
ইউকে/এএস