রাজশাহী অঞ্চলে আরও নিম্নমুখী করোনার মৃত্যু-সংক্রমণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী আঞ্চলে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। প্রতিদিন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মৃত্যুর মিছিলে ২০ জনের বেশি যুক্ত হত।

তবে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর এখন অনেকটাই নিম্নমুখী হয়েছে। ইদের ছুটিতে সংক্রমণ বাড়ার যে শঙ্কা ছিল সেটি হয়নি। যেটাকে কঠোর বিধি-নিষেধ, ভ্যাক্সিনেশন, ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের সুফল হিসেবেই উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা গেলে সংক্রমণ ও মৃত্যু হার একেবারে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞরা জানান, রাজশাহীতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে যেভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়া শুরু হয়েছিল সে অনুপাত এখন অনেক কম। মানুষের মধ্যে সচেনতনা বৃদ্ধি ও স্থানীয় প্রশাসনের লকডাউন বাস্তবায়ন করোনা নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন মানুষ এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের একটা বড় অংশই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাদের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এতে নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা খুব কম।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত রোববার (১৫ আগস্ট) রামেকে ১০ জনের মৃত্যু হয়। দুইটি ল্যাবে রাজশাহী জেলার ১৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ জন। যেখানে সংক্রমণের হার মাত্র ২৪ শতাংশ।

পরের দিন সোমবারও (১৬ আগস্ট) ১০ মৃত্যু হয়েছে। এদিন আরটি-পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী জেলার ৩৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৫৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। সংক্রমণের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। যা আগের দিনের চেয়ে ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ কম।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) ১০ জনের মৃত্যু হয়। এদিন রামেক হাসপাতালের পিসিআর মেশিনে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৪১ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। অন্যদিকে, মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর মেশিনে ২৭৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৪ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। হার ১৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ

বুধবার (১৮ আগস্ট) ৯ জনের মৃত্যু ও ৫৭ জন শনাক্ত হয়েছে। রামেক হাসপাতালের পিসিআর মেশিনে ১৩৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৮ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর মেশিনে ৪৬৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৭ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।

চিকিৎসকরা বলছেন, রাজশাহীতে সংক্রমণের হার কমেছে। লকডাউনের কারণে কিছুটা কমেছে। সবাইকে গণটিকা কার্যক্রমের আওতায় আনা সম্ভব হলে সংক্রমণের হার আরও কমে আসবে। আর সংক্রমণ কম বলেই যে ঝুঁকিমুক্ত এমনটি নয়। যেহেতু করোনা এখনো র্নিমূল হয়নি। টিকা নেওয়ার পাশপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শগুলোও মেনে চলতে হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, টিকাদান ও কঠোর লকডাউনের সুফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণ কমেছে। এছাড়া সাধারণ মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে ফলে সংক্রমণ প্রতিনিয়ত কমছে।

রামেকের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, রাজশাহীতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ হ্রাসের কয়েকটি কারণ আছে। অন্যতম হলো টিকা প্রদান কার্যক্রম। অন্যদিকে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের ফলে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। এতে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোর হার আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এছাড়া গ্রামের মানুষরাও অনেক সচেতন হচ্ছেন। জটিলতা দেখা দিলেই হাসপাতালে আসছেন। এতে সামনে মৃত্যু সংখ্যা আরও কমে আসবে।

করোনার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে রাজশাহী অঞ্চলে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট খুব অল্প সময়ে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় র্যাপিড ফ্রি অ্যান্টিজেন টেস্ট করে সংক্রমিত ব্যক্তিদের আলাদা করা গেছে। তাদের চিকিৎসার মাধ্যমে বেশির ভাগকে সুস্থ করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। করোনার দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর পজিটিভ হচ্ছেন এমন সংখ্যা তেমন নেই।

তিনি আরও বলেন, মহানগরীর মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন সংক্রমণ বাড়ার এলাকা চিহ্নিত করে বিশেষভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করেছে। বিশেষ লকডাউন এক মাস ও সরকারি নির্দেশনায় সারাদেশে সঙ্গে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন হয়েছে। অন্যদিকে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের ফলে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। এসবের সুফল এখন মিলছে।

ইউকে/এএস