ডিসেম্বরের মধ্যে টিকার জোগান ছাড়িয়ে যাবে ২০ কোটি

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: গত মাসে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পর থেকেই টিকা নেওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায় মানুষের মধ্যে। একই মাসে টিকা আসার গতিও বেড়ে যায় আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে। সরকার সাময়িক সময়ের জন্য হলেও বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে টিকা পৌঁছে দেয় গ্রামে মানুষের হাতের নাগাল পর্যন্তও। সব মিলিয়ে করোনামুক্তির আশায় মানুষের প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে টিকা। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা দিয়েই নিজেকে সুরক্ষিত ভাবা যাবে না; সঙ্গে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে ও সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

তবেই করোনামুক্ত বাংলাদেশের পথ নাগালে আসতে পারে। সেদিকে লক্ষ রেখেই সরকার টিকাকেন্দ্রিক পরিকল্পনা বারবার অদলবদল করে দেশে টিকা নিয়ে আসা এবং তা দ্রুতগতিতে মানুষকে দেওয়ার নানামুখী কৌশল নিয়ে কাজ করছে। সরকারের টিকাবিষয়ক নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন, আসছে ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে টিকার জোগান ছাড়িয়ে যাবে ২০ কোটি ডোজ, যা দুই ডোজ হিসাবে পাবে ১০ কোটির বেশি মানুষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, সিনোফার্ম ও মডার্না সব মিলিয়ে টিকা এসেছে তিন কোটি ২০ লাখ ১৭ হাজার ৯২০ ডোজ। এর মধ্যে দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ২১ লাখ সাত হাজার ২৫২ ডোজ। প্রথম ডোজ পেয়েছে এক কোটি ৫৯ লাখ ৭৭ হাজার ৭১২ জন, দুই ডোজ পেয়েছে ৬১ লাখ ২৯ হাজার ৫৪০ জন। গতকাল টিকা পেয়েছে তিন লাখ ৭৯ হাজার ১০২ জন; এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৭৫৮ জন, দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে এক লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৪ জন। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৮ বছরের ওপরের ১১ কোটি ৭৮ লাখ ছয় হাজার মানুষের ৮০ শতাংশের বেশি টিকা পেয়ে যাবে। তবে বিশেষজ্ঞরা এখন থেকেই শিশুদের টিকা নিয়েও আগাম পরিকল্পনা করে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘টিকা হাতে আছে প্রায় এক কোটি ডোজ। আগামী সপ্তাহে সিনোফার্ম থেকে আসবে আরো ৫০ লাখ ডোজ। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে সিনোফার্ম থেকে আসবে দেড় কোটি ডোজ করে মোট ছয় কোটি ডোজ। ডিসেম্বরের মধ্যে রাশিয়া থেকে আসবে এক কোটি ডোজ। ভারতের সেরাম থেকে আসার আশা আছে আমাদের পাওনা দুই কোটি ৩০ লাখ ডোজ। ডিসেম্বরের মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে আসার কথা রয়েছে আরো ছয় কোটি ডোজ।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের টিকা দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। সমস্যা হচ্ছে, টিকা পাওয়া নিয়ে। আমি যে হিসাব দিলাম এর সবই আমাদের কনফার্ম কমিটমেন্ট দেওয়া, কিন্তু আমাদের তো তিক্ত অভিজ্ঞতাও রয়েছে। চুক্তি করে, টাকা পরিশোধ করেও সব টিকা পেলাম না। সামনে যদি কোনো জায়গা থেকে এমন কিছু অপ্রত্যাশিত কোনো বিপত্তি ঘটে, তখন তো আমাদের সব পরিকল্পনা ঠিক রাখা যাবে না। সেটা নিয়ে সব সময়ই চিন্তায় থাকতে হবে। এ জন্য নিশ্চিত করে বলাটাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। তবু আমরা আশাবাদী যে আর কোনো বিপত্তি ছাড়াই আমরা সময়মতো সব টিকা পেয়ে যাব এবং দেশের মানুষকে তা দিতে পারব।’

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, দেশে আগে থেকেই সম্প্রসারিত টিকাদান কমসূচির আওতায় প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। যার সর্বশেষ প্রমাণ মিলেছে গত ৭ আগস্ট এক দিনেই ৩০ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে। ফলে হাতে টিকা থাকলে দেওয়া কোনো সমস্যা নয় বলে তাঁরা মনে করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের টিকার পরিকল্পনা করা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নামার সময় সব দিক বিবেচনায় রাখা জরুরি। বিশেষ করে যেসব দেশ আমাদের এখন নিশ্চিত ওয়াদা দিয়েছে টিকা দেওয়ার জন্য, যদি সামনে ওই সব দেশে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায় তবে ভারতের মতোই আবারও সেই দেশগুলো থেকে আমাদের টিকা পাওয়া কিন্তু অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। ফলে মানুষকে টিকায় উৎসাহী করতে হবে; আবার এমন কিছু করা যাবে না, যাতে মানুষ টিকা দিতে গিয়ে না পেয়ে হয়রানির শিকার হয়।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ পর্যন্ত মোট টিকা এসেছে তিন কোটি ২০ লাখ ১৭ হাজার ৯২০ ডোজ ডোজ। সিনোফার্ম ছাড়া অন্য টিকার মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক কোটি ১৮ লাখ ৪৭ হাজার ৩০০ ডোজ (কেনা ৭০ লাখ এবং ভারত সরকারের উপহার ও জাপানের সহায়তায় কোভ্যাক্স থেকে ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ৩০০ ডোজ), ফাইজারের এক লাখ ৬২০ ডোজ ও মডার্নার ৫৫ লাখ ডোজ।

ইউকে/এএস