বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান বিধি-নিষেধ শিথিল করার পর আজ বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিক হচ্ছে সারা দেশ। আজ থেকে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব কিছু স্বাভাবিকভাবে চালু করা হচ্ছে। এর আগে শতভাগ আসনে যাত্রী নিয়ে পরিবহন চালু হলেও এবার সব গণপরিবহনও চালু হচ্ছে। আজ থেকে পুরোদমে সারা দেশে চলবে বাস ও ট্রেন। তবে পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো সীমিত আকারে খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ থাকছে। সেই সঙ্গে বন্ধ থাকবে সব ধরনের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর বিধি-নিষেধ শিথিল হলেও কঠোরভাবেই মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।
করোনার দ্বিতীয় দফা ঢেউ আঘাত হানলে গত এপ্রিল মাসের শুরু থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ঈদকেন্দ্রিক সাত দিন বাদে পুরো সময়ই দেশে বিভিন্ন মাত্রার বিধি-নিষেধ বা লকডাউন চালু ছিল। দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুর দিকে কম মাত্রার সংক্রমণ ও মৃত্যুতেও বেশি মাত্রার লকডাউন চালু ছিল। এবার সব কিছু খুলে দিচ্ছে সরকার। যদিও গত ১১ আগস্ট থেকে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চলমান কঠোর বিধি-নিষেধ তুলে নেয় সরকার।
১২ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব রেজাউল ইসলামের সই করা প্রজ্ঞাপনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বাদে প্রায় সব কিছুই খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত এলেও কিছু ক্ষেত্রে শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার সরকারের সব সচিবকে নিয়ে হওয়া সচিবসভায় এই কথা বলেন তিনি। তবে ঠিক কবে খোলা হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একই সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম আরো বেশি অনলাইননির্ভর করার নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
পুরোদমে চালু হচ্ছে বাস, ট্রেন : আজ থেকে সারা দেশে পুরোদমে আন্ত নগর ও কমিউটার ট্রেন যোগাযোগ চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ৫০ জোড়া আন্ত নগর ও ৪৪ জোড়া কমিউটার ট্রেন চালানো হবে। এসব ট্রেনের অর্ধেক টিকিট কাউন্টারে আর বাকি অর্ধেক অনলাইনে পাওয়া যাবে। তবে মহামারি মোকাবেলায় ট্রেনে কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। স্বাভাবিক সময়ে ৫২ জোড়া আন্ত নগর ট্রেন চলাচল করে। সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস আপাতত বন্ধ থাকছে। দ্রুতই এ দুটি ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
আন্ত জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় সব বাস আজ থেকে সড়কে চলাচল করতে পারবে। আর আগে থেকে সব লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও তুলনামূলকভাবে লঞ্চে যাত্রীর চাপ কম ছিল।
পর্যটনকেন্দ্র খুলছে : জীবিকা ও অর্থনীতির কথা চিন্তা করে আজ থেকে পর্যটন গন্তব্যগুলো খোলার সুযোগ দিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র আসনসংখ্যার ৫০ শতাংশ ব্যবহার করে চালু করতে পারবে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তে করোনা বিপর্যস্ত খাতটি ঘুরে দাঁড়ানোর কিছুটা সুযোগ পাবে। তবে সংক্রমণ যাতে আবার না বেড়ে যায় তার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। একই সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পর্যটনশিল্পসংশ্লিষ্ট উপখাতগুলো পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।
ইউকে/এএস