নিজস্ব প্রতিবেদক: ভাদ্রের শুরুতেই ফুলে-ফেঁপে ওঠেছে কীর্তিনাশা পদ্মা। গেল কয়েক দিনের বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে- রাজশাহীর পদ্মা নদীতে হু হু করে পানি বাড়ছে।
রাজশাহীতে পদ্মার বিপৎসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১৭ দশমিক ৭৯ মিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বর্তমানে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মার পানি।
প্রতিদিনই প্রায় ৯-১০ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে নদীতে৷ রাজশাহী জেলার পবা ও গোদাগাড়ীতে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ইতোমধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে। এভাবে পানি বাড়লে আগামী সপ্তাহের মধ্যে ভাঙন আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন নদী পাড়ের মানুষ।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতও সময় আসেনি। এভাবে আরও কিছুদিন গেলে তবেই ভাঙন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ আগামী অক্টোবর পর্যন্ত পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে থাকবে। এ সময় বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করবে পদ্মা। গত বছরও সেপ্টেম্বরের পর পদ্মায় আর পানি বাড়েনি। এতে অক্ষত থাকে শহর রক্ষা বাঁধ। এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে কোথাও কোথাও তলিয়ে গেছে ঘর-বাড়ি। কোথাও পুরোনো বাঁধের ব্লক নিচে নেমে যাচ্ছে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ শুরু করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পানি এখনও বিপৎসীমার নিচে থাকলেও রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার ও বাজে কাজলা এলাকায় নদী তীরে পানি ওঠেছে।
২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলী জানান, তার এই এলাকার প্রায় দুই হাজার বাড়িতে পদ্মার পানি ঢুকে গেছে। স্থানীয়দের সহায়তার প্রয়োজন। পদ্মায় পানির স্রোতে মহানগরীর কেশবপুর এলাকার বাঁধের কিছু অংশ ডেবে গেছে। বাঁধটির ধ্বংস ঠেকাতে এখন বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। ২০০০ সালে এই এলাকায় বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল।
রাজশাহী পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক জানান, বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১৭ দশমিক ৭৯ মিটার। এর আগে বুধবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ছিলো ১৭ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার, মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ছিলো ১৭ দশমিক ৬৪ মিটার, সোমবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ছিলো ১৭ দশমিক ৫৫ মিটার এবং রোববার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ছিলো ১৭ দশমিক ৪৫ মিটার। এই পরিসংখ্যান বলছে ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১০ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, পরিস্থিতি যাই হোক এবারও পদ্মার পানি শহররক্ষা বাঁধ অতিক্রম করবে না। আরও তিনদিন পানি বাড়া অব্যাহত থাকবে। তবে আমরা আশা করি এবছর বাঁধ ভেঙে বা বাঁধ উপচে বন্যার পানিতে শহর এলাকা প্লাবিত হবে না।
তিনি আরও বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অনেক উঁচু হওয়ায় জনবসতি এখনও নিরাপদ রয়েছে। তবে পানি কমতে থাকলে নদী ভাঙন আবারও বাড়তে পারে। আমরা সেই ব্যাপারে সজাগ রয়েছি। কোন স্থাপনা ঝুঁকিতে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউকে/এএস