যেভাবে মহররমের পবিত্রতা রক্ষা হয়

ইসলাম বিভাগ: মহররম শুদ্ধতার মাস। উত্তম আমলের সাহায্যে অন্তর আলোকিত করার মাস। চেতনা উজ্জীবিত করার মাস। এ মাসের দশম দিনকে বলা হয় আশুরা—রোজা পালনের দিন। আমলের তিথি। রোজা পালনের মধ্য দিয়ে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার শুভ উপলক্ষ। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, অনেকে কুসংস্কারের মধ্য দিয়ে ১০ মহররমকে উদযাপন করে। এ মাস তাদের কাছে শোকের মাস। মাতমের মাস। তাজিয়া বানিয়ে রাস্তায় শোভাযাত্রা করার দিন। এ দেশে নানাবিধ কুসংস্কারের মধ্য দিয়ে ১০ মহররম পালন করা হয়। এখানে কয়েকটি তুলে ধরা হলো—

মিলাদ-মাহফিল উদযাপন : এ দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মিলাদ-মাহফিলের অনুষ্ঠান করে। এসব অনুষ্ঠানে হরেক রকম আলোকসজ্জা, রংবেরঙের লাইটিং ও নানা অশালীন কর্ম আর অপচয়ের মধ্য দিয়ে পালিত হয় মাহফিল। অথচ ইসলাম অপচয় রোধ করতে তাগিদ দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা খাও, পান কোরো, অপচয় কোরো না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

শোক প্রদর্শনে বুক চাপড়ানো : এ দিনে অনেকে নিষিদ্ধ পন্থায় শোক প্রকাশ করে। ইসলামে কারো মৃত্যুতে এমন অবৈধ পন্থায় শোক পালন করা হারাম। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (মৃত্যু শোকে) মুখে আঘাত করে, কাপড় ছিঁড়ে এবং জাহেলি যুগের মতো মাতম করে ওই ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৯৭, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৩)

অন্য হাদিসে আরো হুঁশিয়ার কণ্ঠে বিধৃত হয়েছে, ‘আমি ওই ব্যক্তি থেকে মুক্ত, যে শোকে মাথা মুণ্ডন করে, উচ্চ স্বরে কাঁদে ও কাপড় ছিঁড়ে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৪)

বরকতের পিঠা নামে অপপ্রচার : কিছু মানুষ পিঠা, নাড়ু চড়া মূল্যে বিক্রি করে। বরকতের পিঠার কথা বলে ব্যাপক বিক্রি ও অধিক লাভবান হয়। মানুষকে ধোঁকা দেয়। ইসলামে মিথ্যা বলা ও ধোঁকা দেওয়া নিষিদ্ধ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০১, তাবরানি, হাদিস : ৭৩৮)

গানের আসর : ১০ মহররমের এই দিনে কোথাও কোথাও জোট বেঁধে গানের আসর জমানো হয়। সেখানে নারী-পুরুষ একত্রে নাচানাচি করে। বানোয়াট সব গান ধরে ইতিহাস বিকৃত করে। ইতিহাসের সুনামধন্য ব্যক্তিদের অশালীন অকথ্য গানের সুরে ‘মালওন-কাফের’ বলে চেঁচায়। ইসলামে নিষিদ্ধ গানের সঙ্গে চির হারাম বাজনাকে মিশিয়ে দিয়ে নাফরমানির চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করে তারা। আল্লাহ বলেন, ‘আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা ক্রয় করে, আর তারা ওইগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ০৬)

এ ছাড়া কোরআন-হাদিস পরিপন্থী বহু কাজের উদ্ভব হয় ১০ মহররম। অনেককে দেখা যায়, এই দিনে সুসজ্জিত অশ্বারোহী হয়ে কারবালা যুদ্ধের মহড়া সাজায়। যুদ্ধের ক্রীড়া দেখায়। কেউ আবার কালো পোশাক পরিধান করে ও কালো ব্যাজ ধারণ করে। এমনকি এই দিনে বিবাহ-শাদি, পানি পান, শিশুকে স্তন্য দান অনেকে পাপ মনে করে। এভাবে কলঙ্কিত হচ্ছে ইতিহাসের পবিত্র ১০ মহররম। আমরা আল্লাহর কাছে ১০ মহররমের শুদ্ধতা কামনা করি।

ইউকে/এএস