নিজস্ব প্রতিবেদক: কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রাজশাহীতে পদ্মায় হু হু করে পানি বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে।
এতে পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। রাজশাহী মহানগরীর ২৪, ২৮ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের অন্তত দুই হাজার ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। নদীতীরে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
কোথাও কোথাও শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানিতে ডুবে যাচ্ছে। পদ্মায় পানি এসে স্রোতের ধাক্কা খাওয়ায় পুরনো এসব বাঁধ এখন নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পানি বৃদ্ধি ও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন পদ্মাপাড়ের মানুষজন। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী পাউবো জানায়, রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। নগরীর বড়কুঠি পয়েন্টে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে ১০ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। আগস্ট মাসজুড়েই পানি এভাবে বাড়তে পারে। শনিবার (২১ আগস্ট) সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮৫ মিটার। ফলে বর্তমানে রাজশাহীতে বিপদসীমার মাত্র ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা।
এর আগে শুক্রবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৮৩ মিটার। আর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১৭ দশমিক ৭৯ মিটার। বুধবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার, মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৬৪ মিটার, সোমবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৫৫ মিটার এবং রোববার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৪৫ মিটার। মূলত এক সপ্তাহ থেকে পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে পানি বাড়ছে।
পদ্মায় পানি বাড়ার কারণে তীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মহানগরীর ২৪, ২৮ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চলের অন্তত দুই হাজার বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। এতে এসব এলাকায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। পানি এখনো বিপদসীমার নিচে থাকলেও নগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার ও বাজে কাজলা এলাকায় নদীতীরে পানি উঠে গেছে।
রানীনগর এলাকায় অবস্থিত ‘আলোর পাঠশালা’ বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। বিদ্যালয়টির আশেপাশে যত বাড়িঘর রয়েছে সবই পানির নিচে। মহানগরীর ওপারে চর খিদিরপুর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। চারঘাট, বাঘা এবং গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মার চর ভাঙছে। নতুন করে গোদাগাড়ীর নিমতলা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পানি বাড়ায় নদী তীরবর্তী লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে শুরু করেছেন। প্রায় সব বাড়িতেই হাঁটু থেকে কোমড় পানি। ঘর-বাড়ির মধ্যে পানি ঢুকে যাওয়ায় অসংখ্য লোকজন বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে বহুগুণ। বন্যার আশঙ্কায় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নদীর তীরবর্তী বেশ কয়েকটি পরিবার জানায়, নদীতে পানি বাড়লেই চোখের ঘুম হারাম হয়ে যায়। বসতবাড়ি ভাঙন আতঙ্কে কাটে দিন। বেশকিছু জায়গায় বেড়িবাঁধের ওপরে পনি উঠে গেছে। ফসলি জমিতেও পানি উঠে গেছে। সব মিলিয়ে বিপদের মধ্যেই দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।
মহানগরীর তালাইমারি শহীদ মিনার এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, নদীতে প্রচণ্ড স্রোত রয়েছে। প্রতিদিনই পানির স্রোত ও উচ্চতা বাড়ছে। বাড়িতে ঢোকার অবস্থা নেই। বাড়ির চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে।
রানীনগর এলাকার খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের বাড়িতে হাঁটু পানি উঠেছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা পানির নিচে ডুবে গেছে। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম বিপদে আছি।
এদিকে, আগস্ট মাসজুড়েই পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান রাজশাহী পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক। তিনি বলেন, আগস্ট মাসের শুরু থেকেই পদ্মায় পানি বাড়তে থাকে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পদ্মার পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। আগস্ট মাসজুড়েই পানি এভাবে বাড়তে পারে।
জানতে চাইলে রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, শহর রক্ষা প্রকল্পের আওতায় যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল সেগুলো আমরা মনিটরিং করছি। পানি বাড়ার বিষয়টি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে বলেও জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই নির্বাহী প্রকৌশলী।
ইউকে/এএস