বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদের অসুস্থ মায়ের সেবায় হাসপাতালে ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি ইস্যু করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী রেজাউল করিম বলেন, আমি ঢাকার বাইরে ছিলাম। গণমাধ্যম সূত্রে আমি জানতে পেরেছি আমাদের মন্ত্রণালয়ের সচিবের মায়ের চিকিৎসার জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আজ একনেক মিটিংয়ে আমি সচিবকে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমি কাউকে এ ধরনের কোনো কাজ করতে বলিনি। তিনি নিজেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন, তারপরে তার ৯৫ বছর বয়সী মা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি অসুস্থ মাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। হয়তো মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কেউ কেউ হাসপাতলে সহানুভূতি জানাতে গেলে যেতে পারেন, সেখানে তিনি কাউকে কোনো দায়িত্ব দেননি। আমি মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেছি মন্ত্রণালয়ের সচিবের মায়ের দেখভাল করার জন্য কাউকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
তিনি জানান, মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের কোনো কিছু করা হয়নি। এমনকি কাউকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সচিব অসুস্থ থাকা অবস্থায় আমি নিজেও হাসপাতালে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম, আমারতো মনে হয় আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকলেও গণমাধ্যমের অনেকে সহানুভূতি জানাতে যেতে পারেন বা অন্য কেউ যেতে পারেন। একইভাবে তাকে দেখতে যেতে অনেকে সহানুভূতি জানাতে যেতে পারেন। মন্ত্রণালয় থেকে যেসব চিঠি ইস্যু করা হয় তার একটা দাপ্তরিক তারিখ থাকে এবং কর্মকর্তার সই থাকে। মন্ত্রণালয় থেকে খোঁজ নিয়ে দেখেছি মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের কাউকে দায়িত্ব দিয়ে কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি।
চিঠি ছাড়াও কাউকে এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, এ বিষয়ে কাউকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সচিব আমাকে জানিয়েছেন কাউকে তার অফিসিয়াল নিয়মের বাইরে গিয়ে তার মাকে দেখভাল করা বা কোনো দায়িত্ব পালন করার জন্য তিনি বলেননি।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমি গণমাধ্যমের নিউজের একটি জায়গায় দেখেছি শুধুমাত্র দায়িত্ব দেওয়া নয় রীতি মতো চিঠি ইস্যু করেছে মন্ত্রণালয়। চিঠি ইস্যু করা হলে একটা স্মারক নম্বর থাকে, মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা, কনসার্ন অফিসারের সই থাকে। আমি চেক করে দেখেছি মন্ত্রণালয় থেকে এ রকম কোনো কিছু হয়নি। এবিষয়ে এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই। সচিব বলেছেন, তিনি মৌখিকভাবেও এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেননি।
এর আগে সোমবার দেশের বেসরকারি একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশনে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রওনক মাহমুদের মায়ের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন এক উপ-সচিবসহ ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের লিখিত নির্দেশনা দিয়ে তিন দিনের জন্য চার শিফটে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্ব সমন্বয় করছেন সচিবের পিএস।
নির্দেশনায় বলা হয়, সচিবের মায়ের সার্বিক অবস্থা সার্বক্ষণিক জানাতে হবে পিএসকে, চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ, টেস্ট করানো ও তা দ্রুত সংগ্রহ করা এবং হোয়াটসঅ্যাপে সচিবের পিএসকে রিপোর্টের কপি পাঠাতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে থাকতে হবে রোগীর কাছাকাছি, রোগীর অ্যাটেনডেন্টের কাছে জানান দিতে হবে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি।
নির্দেশনার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সোমবার (২৩ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. ইলিয়াস হোসেন ও অফিস সহায়ক মো. জাহিদুল ইসলাম, দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসলামুল আলাম, ট্রেইনি সহকারী মো. সানোয়ার হোসেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের (ডিএলএস) অ্যানিমেল প্রোডাকশন অফিসার আলী রেজা আহমেদ ও ল্যাব টেকনেশিয়ান বিভূ চন্দ, রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত মৎস্য অধিদফতরের (ডিওএফ) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান ও ট্রেইনি সহকারী সানোয়ার হোসেন দায়িত্ব পালন করবেন।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডিওএফের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মো. রাশেদ পাভেজ এবং অফিস সহায়ক মো. নাজির হোসেন পারভেজ, দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিএলআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসলামুল আলাম, ট্রেইনি সহকারী মো. সানোয়ার হোসেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রোগ্রামার নূর মোহাম্মদ ও অফিস সহায়ক মো. আব্দুল কাদের, রাত ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডিএলএসের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ফারুক মিয়া ও ল্যাব টেকনেশিয়ান মো. শহিদ উল্যাহ দায়িত্ব পালন করবেন।
বুধবার (২৫ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপ-সচিব পুলকেশ মণ্ডল ও ট্রেইনি সহকারী জগদীশ চন্দ্র দাস, দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিএলআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসলামুল আলাম ও ট্রেইনি সহকারী মো. সানোয়ার হোসেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ডিওএফের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ণ কর্মকর্তা মো. সামছুল আলম পাটওয়ারী ও অফিস সহায়ক মো. মফিজ হোসেন, রাত ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডিএলএসের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এসএম নিয়াজ মোর্শেদ ও ল্যাব টেকনেশিয়ান জিএম শাহিনুর ইসলাম দায়িত্ব পালন করবেন।
ইউকে/এএস