ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা করেই যাচ্ছে ইসরায়েল

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ শহরের একটি গ্রাম নবী সালেহ। গ্রামের তিন বছর বয়সী শিশু উমর তামিমি। মায়ের কাছে বারবার প্রশ্ন করছিল, ‘মা, মুহম্মদ কোথায়?’

মুহম্মদ উমরের বড় ভাইয়ের নাম। ছেলে কোথায়, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা বারআ। কারণ গত মাসে ইসরায়েলের সৈন্যরা পেছন থেকে তিনটি গুলি করে মুহম্মদকে হত্যা করেছে।

বারআ বলেন, আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সে মারা যায়। তাকে বাঁচানো যায়নি।

২৩ জুলাই যেদিন মুহাম্মদ মারা যায়, সেদিন নবী সালেহ গ্রামে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। কিন্তু ইসরায়েলি সৈন্যরা প্রায় প্রতিদিন গ্রামে ঢুকে পড়ে। তারা স্থানীয়দের উসকে দেওয়ার চেষ্টা করে। টিয়ার গ্যাস ছুড়ে মারে।

প্রায় ৬০০ লোকের বসবাস নবী সালেহ গ্রামে। বেশিরভাগ বাসিন্দাই তামিমি বংশের। তাদের ইতিহাসে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ যেন নিয়মিত ব্যাপার।

বারআ বলেন, ইসরায়েলি সৈন্যরা যখন আমাদের বাড়িতে টিয়ার গ্যাস ছুড়ছিল, তখন বাড়ির পেছনে ছিল মুহম্মদ। আমি অন্য বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য বাড়ির ভেতরে যেতে বাধ্য হই। পরে আমি তার এক ভাইকে খুঁজতে বের হই। সে সময় পরপর তিনটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। সত্যি বলতে এগুলো ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড।

জুলাইয়ের ২৮ তারিখ বেইত উমার গ্রামে মারা যায় ১১ বছর বয়সী শিশু মুহম্মদ আবু সারা। বাবার গাড়িতে ছিল সে। সৈন্যরা গাড়িতে ১৩ রাউন্ড গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। সেদিনও গ্রামে কোনো সংঘর্ষ ছিল না।

ইসরায়েলি সৈন্যদের বক্তব্য, যখন গাড়ি থামানোর সংকেত দেওয়া হয়েছিল, তারা থামায়নি।

ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল প্যালেস্টাইন (ডিসিআইপি) জানায়, আন্তর্জাতিক আইনে তখনই এমন আচরণ সমর্থনযোগ্য যখন জীবনের হুমকি থাকে। কিন্তু তারপরেও তদন্ত ও প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে এটা বলা যায়, ফিলিস্তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে এমন প্রাণঘাতী শক্তির ব্যবহার বিচার বহির্ভূত ও ইচ্ছাকৃত হ্ত্যাকাণ্ড হতে পারে।

মঙ্গলবার ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে নিহত হয় ১৫ বছর বয়সী আরেকটি শিশু।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইমাদ খালেদ সালেহ নামের শিশুটি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই-কমিশনার (ওএইচসিএইচআর) জানিয়েছে, চলতি বছর নিহত ১২ জন শিশুর মধ্যে তিনজনই পশ্চিম তীরের।

এর আগে মে মাসে গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণে ৬৭ শিশু নিহত হয়।

ইউকে/এএস