হাসেম ফুডস অগ্নিকাণ্ড: দুর্ঘটনা নয়, ‘হত্যাকাণ্ড’

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড এবং ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় দায়ী দুই ধরনের কারণ পেয়েছে নাগরিক তদন্ত কমিটি দল। বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বেচ্ছায় গঠিত এই কমিটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কর্মকর্তাদের গাফিলতিও খুঁজে পান।

মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে নিজেদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে নাগরিক তদন্ত কমিটি।

৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও সরকারিভাবে ৫২ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনার পাচঁ দিন পর ১৩ জুলাই ১৯ সদস্যের সমন্বয়ে একটি নাগরিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

প্রায় এক মাস ১৭ দিন পর নিজেদের সেই তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করে নাগরিক তদন্ত কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া কমিটির পক্ষে এই তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন। তদন্তে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হয়। এছাড়াও ৩৩ জনের পরিবর্তে আহতও অনেক বেশি বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।

বিষয়টিকে দুর্ঘটনা না বলে, ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে দাবি কমিটির। আর এর এই মৃত্যুর পেছনে দুই ধরনের মূল কারণ চিহ্নিত করা হয় – উপকরণগত এবং অবকাঠামোগত।

ভবনটিতে ফায়ার অ্যালার্ম না থাকা, অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র ও ব্যবস্থা না থাকার মতো কারণগুলোকে উপকরণগত কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যদিকে আগুনরোধী সিঁড়ি না থাকা, দু’টি সিঁড়ি পরিকল্পনা অনুযায়ী আগুনরোধী উপকরণ দিয়ে মূল অংশ থেকে আলাদা না করার মতো কারণকে, অবকাঠামোগত কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী সিঁড়ি তৈরি হলে সেখানে ধোঁয়া ঢুকতো না এবং পেছনের সিঁড়ি তালাবদ্ধ থাকলেও পেছনের গেট দিয়ে শ্রমিকেরা বের হতে পারতেন বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল দপ্তর ও সেখানকার কর্মকর্তাদেরও দায়ী করা হয় নাগরিক কমিটির তদন্তে। কমিটির সদস্য সচিব ও শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, দায়িত্বশীল কেউ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে নাই। এর জন্যই এতো মৃত্যু হয়েছে। এখানে শ্রম আইন, অগ্নি নির্বাপন আইন পালন করা হয় নাই। ফলে তাজরীনের মতো আরও এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। তদন্তে ৮০ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ও হতাহত প্রতিরোধে ১০ ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এর মধ্যে কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য না করা, কারখানা ভবনের নকশা অনুমোদন, অগ্নিনির্বাপণ ও শ্রম আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের কমকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা, প্রতিষ্ঠান সমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, তালিকভুক্ত ও তালিকা বহির্ভূত করাখানা সমূহ পরিদর্শন করা অন্যতম।

সংবাদ সম্মেলনে হাসেম গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের জামিন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, নিম্ন আদালতে সাধারণত হত্যা মামলার আসামীদের জামিন দেওয়া হয় না। তখন উচ্চ আদালত থেকে নানান কারণে দেওয়া হতে পারে। তবে এই ঘটনায় মাত্র ৭দিনের মধ্যে হাসেম গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ তার ছেলেদের জামিনে বের হয়ে আসার বিষয়টি ‘অস্বাভাবিক’। সংবাদ সম্মেলনে কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ইউকে/এএস