ভাত না খেয়ে ২১ বছর!

শেরপুর সংবাদদাতা: মাছে-ভাতে বাঙালি। ভাত বাঙালিদের প্রধান খাদ্য। বাঙালিরা যেখানে ভাত খেয়ে বেঁচে থাকে, সেখানে জন্মের পর থেকে ২১ বছর পার হলেও এ পর্যন্ত ভাত না খেয়েই দিব্যি জীবনযাপন করছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বাউসা কবুতরমারী গ্রামের মাহিদ হাসান লাভলু নামে ২১ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী।

লাভলু বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বাউসা কবুতরমারী গ্রামের আলম মিয়া ও লাল ভানু দম্পতির ঘরে ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। এ দম্পতির ৩ ছেলে সন্তানের মধ্যে লাভলু সবার বড় সন্তান। বর্তমানে তিনি শেরপুর সরকারি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্স শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত।

মাহিদ হাসান লাভলুর বাবা আলম মিয়া বলেন, ‘লাভলু জন্মের ৬ মাস পর্যন্ত তার ভাত না খাওয়ার বিষয়ে বুঝতে পারিনি। তবে ৬ মাস পরে যখন তার মুখে ভাত দেওয়া হয় সঙ্গে সঙ্গে সে বমি করে ফেলে দেয়। যতোবার তার মুখে ভাত দেওয়া হয়েছে ততোবারই সে বমি করে দিতো। এটাকে রোগ মনে করে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তাররা কোনো রোগ ধরতে পারেননি। তবে ভাত ছাড়া অন্য কোনো খাবারে তার সমস্যা হতো না। এরপর প্রায় ২ বছর শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করে বড় হতে থাকে। মাঝে মধ্যে ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করলেই সে বমি করে দিত। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে আর ভাত খাওয়ানোর জন্য জোর করা হয়নি। এরপরে লাভলু আর ভাত খেতে পারেনি। বর্তমানে তার বয়স ২১ বছর হলেও একটি বারও ভাত খাওয়া হয়নি। ভাত ও চালের তৈরি খাবার ছাড়াই চলছে তার জীবন। ’

২১ বছর ধরে লাভলু শুধু সেদ্ধ ডাল, ছোলা, ডিম, দুধ ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার খাদ্য চাহিদা বাড়তে থাকে। লাভলুর খাবার ও সন্তানের পড়া-লেখার খরচসহ সংসারিক ব্যয় বহন করতে আলম মিয়া অপারগ হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় লাভলু নিজের পড়া-লেখাসহ নিজের অন্য ব্যয় বহন করতে শুরু করেন টিউশনি। লাভলু এখন টিউশনি করে তার সকল ব্যয় চালানোসহ পরিবারিক কাজে সামান্য সহায়তা করেন। তবে করোনার কারণে টিউশনি কমে যাওয়ায় আপাতত তিনি নিজের খরচ নিজেই চালাচ্ছেন।

লাভলুর মা লাল ভানু বলেন, ‘জন্মের ৬ মাস পর চালের তৈরি নরম খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করে আমরা বার বার ব্যর্থ হয়েছি। ভাতসহ চালের তৈরি খাবার খেতে না চাইলে তাকে মারধর করেও কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে তাকে তার চাহিদা অনুযায়ী খাবার খেতে দেওয়া শুরু হয়। তার যা ভালো লাগে, সে তাই-ই খায়। বর্তমানে তার বয়স ২১ বছর পার হলেও সে একবারও ভাত খেতে পারেনি। ’

লাভলু বলেন, ‘আমি নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চন্দ্রকোনা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। বর্তমানে আমি শেরপুর সরকারি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্স করছি। ভাত দেখলেই আমার খারাপ লাগে, বমি বমি ভাব শুরু হয়। তাই সহজলভ্য ছোলা আমার প্রধান খাবার হয়ে গেছে। ছোলা খেয়ে আমার শরীর-স্বাস্থ্য ভালো আছে, কোনো সমস্যা হচ্ছেনা।

ইউকে/এএস