হেসেখেলে জিতল বাংলাদেশ

ক্রীড়া বিভাগ: এতটা কেউ হয়তো ভাবেনি। তবে মিরপুরের ‘রহস্যভূমি’তে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সারির দলটি যে বাংলাদেশের কাছে হারবে, তা অনুমিতই ছিল। তাই হোয়াটসঅ্যাপের প্রাইভেট গ্রুপগুলোতে গতকাল সফরকারীদের উইকেট পতনে উচ্ছ্বাসের জায়গা নিয়েছিল ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। তবে এর চেয়েও বেশি ছিল আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে তামিম ইকবালের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাসংবলিত ভিডিও বার্তার পেছনের কারণ। এ দেশে কেউ তো আর এমনি এমনি সরে দাঁড়ায় না, নিশ্চয় এর পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে! পরিচিত সংবাদকর্মীর কাছ থেকে সেসব জানতে ব্যাকুল ক্রিকেট অনুসারীরা।

তামিম কেন এমন ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারিভাবে ভিডিও বার্তার বেশি কিছু জানা যায়নি। একই বার্তায় তিনি যে মিডিয়াকেও সবিনয়ে কোনো প্রশ্ন না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর, তাঁকে নিতে একজন জুনিয়র ক্রিকেটারকে বাদ দিতে টিম ম্যানেজমেন্টের একাংশের গাঁইগুঁইয়ের খবর পেয়েই ভিডিও স্ক্রিপ্ট লিখতে বসে পড়েন তামিম। ভিডিওতে তাঁর হাসিমুখের আড়ালে অভিমান কি মিশে ছিল? থাকতেও পারে। এত সিনিয়র ক্রিকেটার যখন, তখন বিষয়টি নিয়ে টিমের তরফ থেকে তাঁর সঙ্গে সরাসরি আলাপ করলেই সম্ভবত বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচের গুরুত্ব বাঁচিয়ে রাখা যেত।

অবশ্য সিনিয়র ক্রিকেটারকে ডেকে তাঁকে অগ্রাহ্য করার চর্চা আবেগপ্রবণ উপমহাদেশে কমই আছে। সৌরভ গাঙ্গুলি অবশ্য এমন অনন্য একটি নজির স্থাপন করেছিলেন ২০০৭ বিশ্বকাপে। তিনি নাকি নিজের রুমে অনীল কুম্বলেকে ডেকে নিয়ে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘এই নে, কালকের ম্যাচের ইলেভেন তুই তৈরি কর।’ প্রতিপক্ষ এবং নিজ দলের একাদশের ভারসাম্য রাখতে গিয়ে নিজের নামটাই বাদ দিতে হয়েছিল কুম্বলেকে।

অবশ্য ৬০ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচের দিনে এমন কিছু না ঘটলে তো লেখারই কিছু থাকত না! টস জিতে নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামার পর থেকে মনে হচ্ছিল এদেরও আগেই নিজের রুমে ডেকে নিয়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করিয়ে দিতে পারতেন মিরপুরের কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা, ‘দেখো বাপুরা, তোমরা দূরদেশ থেকে এসেছ। আমাদের অতিথি। তাই রীতি ভেঙে তোমাদের সেন্টার উইকেটে প্র্যাকটিসের সুযোগ দিয়েছি, এতেই সন্তুষ্ট থাকো। জেনে রেখো, এই উইকেট দুই দিনের অনুশীলনে বুঝে ওঠার বস্তু নয়।’

অনেক রোমাঞ্চ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। ২০১৬ সালে যুব বিশ্বাকাপ খেলতে এসেছিলেন প্রথম। তখনই জেনে গেছেন কি ভীষণ দুর্বোধ্য বাংলাদেশের উইকেট। প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল তাঁর দল, হেরেছিল নেপালের কাছেও। রাচিন গতকাল মিরপুরে নেমে তৃতীয় বলেই বুঝে গেছেন ঢাকার জল-হাওয়া পাঁচ বছরে আরো দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে। মেহেদী হাসানের লেগ-মিডলে পিচ করা বলে পুশ করেছিলেন।

ততক্ষণে উইকেট শিকারের তুমুল লড়াই বাংলাদেশ দলের বোলিং ইউনিটে। ধীরগতি, ঘূর্ণি আর অসমান বাউন্সের উইকেটে স্টাম্পে বল রেখে গেছেন বাংলাদেশি বোলাররা। আর টপাটপ উইকেট দিয়ে গেছেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। নিয়মিত পাঁচ বোলারের ফিগারেই উইকেট রয়েছে। সবচেয়ে বেশি মুস্তাফিজুর রহমানের, ১৩ রানে ৩ উইকেট।

আর ম্যাচ শেষে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথামের অভিব্যক্তিই দেখে মনে হচ্ছিল পুরো দল নিয়ে তিনি ভুল ভুলাইয়ার চক্করে পড়েছেন। মিরপুরের উইকেট তো অতিথি দলের জন্য এমনই। তবে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ‘এটা প্রথম ম্যাচ ছিল। আশা করি, এই অভিজ্ঞতা পরের ম্যাচগুলোয় কাজে লাগবে।’

জানা নেই কঠোর বায়ো বাবলের মধ্যে দুই দল একসঙ্গে ডিনার করে কি না। যদি করে থাকে, তবে মাহমুদ উল্লাহ কি একবার ল্যাথামকে আড়ালে ডেকে বলবেন নাকি, ‘আমরা এত বছর খেলেও পুরো বুঝলাম না। আর তুমি কিনা একটা ম্যাচ খেলেই বুঝতে চাচ্ছ মিরপুরের উইকেটকে!’

নাহ, তেমন সম্ভাবনা নেই। গতকালই বোঝা হয়ে গেছে ৪-১ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জেতা এটা ৫-০ করতে মরিয়া।

ইউকে/এএস