সেপ্টেম্বরের পর এডিসের প্রকোপ কমবে: তাজুল ইসলাম

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: চলতি সেপ্টেম্বর মাসের পর এডিসের প্রকোপ কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

আজ শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে নগরবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিয়ে ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।

তাজুল ইসলাম বলেন, সেপ্টেম্বরের পর এডিসের প্রকোপ কমবে। কারণ তখন আবহাওয়া পরিবর্তন হবে। এটা বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্য। ডেঙ্গু নিয়ে ২০১৯ সালের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর আমরা বসে ছিলাম না। আমরা কাজ করেছি। কীটনাশকের কার্যকারিতা নিয়ে তখন একটা বিতর্ক ছিল। আসলে তখন কীটনাশকটা মশার জন্য সহনশীল হয়ে গিয়েছিল। তবে সেই সমস্যা আমরা সমাধান করতে পেরেছি। এখন মশক নিধনে দুই মেয়রসহ কাউন্সিলররা ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। মশক নিধনে আমরা প্রতিবেশী দেশ ভরত, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাচ্ছি।

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘মশা বাড়ার একটা নির্দিষ্ট কারণ নেই। অনেকগুলো কারণ আছে। বৈশ্বিক পরিবর্তন অবশ্যই একটা মূখ্য বিষয়। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণেরও কিছু ভূমিকা আছে। সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেই এটা যেমন তারা বলতে পারবেন না, আবার জনগণও তার দায় এড়াতে পারে না।’

ডেঙ্গু প্রতিরোধ সেল গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, পূর্ণ বয়স্ক মশা মারার চেয়ে লার্ভা মারা বেশি জরুরি। কারণ বড় মশা উড়ে যায়। কিন্তু লার্ভাতো আর উড়তে পারে না। ফলে এদের মারা সহজ। ২০১৯ এর পর বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন ২০২০ সালে ডেঙ্গু আরো বাড়বে। তবে সেটা হয়নি। কিন্তু তাই বলে আমি বলব না যে তাঁদের গবেষণা ভুল ছিল। তাঁরা একটি এলাকা ধরে গবেষণা চালান। তবে এটা ঠিক যে ট্রপিক্যাল অঞ্চলে এডিসটা বেশি হয়।

জনগণকে সচেতন করতে পরিচালিত কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, আমরা ডেঙ্গু নিয়ে যে টিভিসি দেখাচ্ছি সেটা নগরবাসীর একবারও দেখে বলে আমার মনে হয় না। আমার মনে হয় বেশিরভাগ মানুষ ইন্ডিয়ান সিরিয়াল দেখে। সেটা খারাপ আমি বলছি না। তবে আমরা মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছি না- সেটা সঠিক না। আসলে লকডাউনের সময় মানুষ ঘরবাড়ি বন্ধ করে বাড়ি চলে গেছে। ফলে বাসার মধ্যে জমা পানি পরিষ্কার করার কেউ নেই। এটাও মশা বৃদ্ধির একটা কারণ। আমি কিন্তু প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি ভাগে ভাগ করেছি। কাউন্সিলর, শিক্ষক, ইমাম, ধর্মীয় নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নিয়ে কমিটি করা হয়েছে মানুষকে সচেতন করতে।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের কোনো সহায়তা দেওয়া হবে কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তাজুল ইসলাম বলেন, আপনারা তালিকা দেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং সরকারি ফান্ড থেকে সহায়তা দেব। আর এই পর্যন্ত যাঁরা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন আমি তাঁদের পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।

আপনি বলেছিলেন আগস্টে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে, এখন বলছেন অক্টোবরে- এই ব্যর্থতা কার এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আসলে অক্টোবরের পর বৃষ্টি কমে যাবে ফলে তখন এডিসের ডিম থেকে লার্ভা হওয়ার সুযোগ থাকবে না। ব্যর্থতা কার এটা সুনির্দিষ্ট করার সুযোগ নেই। আমারও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ‘মেয়র তাপসের এই মুহূর্তে বিদেশ ভ্রমণকে কীভাবে দেখছেন। জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ তাপসের ব্যক্তিগত কিছু বিষয় আছে। ডেঙ্গুর জন্য তিনি যেতে পারেননি। তাপস ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য বিদেশ গেছেন।’

অনুষ্ঠনে পাবলিক পার্লামেন্টে সরকারি দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং বিরোধী দল হিসেবে অংশ নেয় আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বিতর্ক অনুষ্ঠানে সরকারি দল বলে, সরকারের পাশাপাশি জনগণ সতর্ক না হলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এসময় এডিস নিয়ন্ত্রণে সরকারি দল ঢাকার দুই মেয়রের কার্যক্রম তুলে ধরে। অনুষ্ঠানে জয়ী হয়েছে সরকারি দল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

বিরোধীদলীয় নেতারা বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার। তারা শুধু জরিমানা আর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সীমাবদ্ধ।

অনুষ্ঠনের সঞ্চালক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ঢাকার দুই মেয়র ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই। মশারতো কোনো সীমানা নেই। ফলে উত্তর, দক্ষিণ না করে বরং ঢাকার দুই মেয়রকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য ব্লাড ব্যাংক, আর্থিক সহায়তা, মশক নিয়ন্ত্রণে কমিটি, নতুন কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগসহ নানা দাবি জানানো হয়।

ইউকে/এএস