সরকার না চাইলে নির্বাচনে ভূমিকার সুযোগ নেই

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: বাংলাদেশ সরকার না চাইলে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সহযোগিতা করার সুযোগ নেই—এমনটিই বলেছেন এ দেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো। কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাবের সঙ্গে গতকাল রবিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেছেন।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতিসংঘের সম্ভাব্য ভূমিকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘জাতিসংঘের কাছে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় সহযোগিতা না চাইলে জাতিসংঘ সহযোগিতা করে না। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানানোর ওপর। জাতিসংঘ নিজে থেকে এ ক্ষেত্রে কোনো সহযোগিতা করে না। তবে অনুরোধ পেলে সহযোগিতা কাঠামোর আওতায় জাতিসংঘ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের বার্তাটি এমন এক সময় এলো, যখন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে।

কূটনৈতিক ও সরকারি সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে জাতিসংঘের যে খুব বেশি ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই, তা এবার আগেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতিসংঘ বেশ সরব থাকলেও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল বেশ সীমিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ সম্পর্ক এবং নানা রাজনৈতিক সমীকরণ বড় ভূমিকা রেখেছিল। বান কি মুন বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় উৎসাহিত করতে বিশেষ দূত পাঠিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সেই নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফর করলেও বিশেষ দৃষ্টি ছিল রোহিঙ্গা সংকটের দিকে।

জানা গেছে, নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা বা কারিগরি কোনো সহযোগিতার জন্য কোনো দেশের সরকার জাতিসংঘকে অনুরোধ করতে পারে, কিন্তু সরকার যদি মনে করে বিদেশি বা জাতিসংঘের সহযোগিতার প্রয়োজন নেই এবং সে নিজেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম তাহলে সহযোগিতা চাইবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা—এসব বিষয়ে জাতিসংঘ সব সময়ই তার অবস্থান থেকে বক্তব্য দিয়ে থাকে। মানবাধিকার পরিষদসহ মানবাধিকারবিষয়ক বিভিন্ন কমিটিতে এসব বিষয়ে আলোচনাও হয়ে থাকে। তবে এগুলোর সঙ্গে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সহযোগিতার কোনো সম্পর্ক নেই।

নাগরিক অধিকার সংকুচিত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ : গতকালের ডিকাব-টক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বেশ কিছু বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক। নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এগুলোর অন্যতম। তিনি বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান বৈষম্যে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে এটি বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নাগরিক সুযোগ কমে আসার লক্ষণেও উদ্বিগ্ন। এটিও একটি বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়। আমরা আশা করি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন হলে পরিস্থিতি বদলাবে।’

মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘আমাদের মানতে হবে যে মানবাধিকারের সুরক্ষা দেওয়ার সম্মিলিত দায়িত্ব আছে। এখানে গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব রয়েছে।’

মিয়া সেপ্পো নিপীড়িতদের গোপনীয়তা সুরক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই আইন পর্যালোচনা ও সংশোধন ‘ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউর (ইউপিআর)’ অন্যতম সুপারিশ। বাংলাদেশ ওই সুপারিশকে সমর্থন করেছে। আইনটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়া উচিত। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁদের (বিদেশি দূতদের) ভালো আলোচনা হয়েছে।

মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘ওই আইনের (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) অপব্যবহার কমাতে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক স্বাধীনতা বিশ্বব্যাপী নিশ্চিত করার ওপর ওপর জোর দেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক। নাগরিকদের জন্য সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসা এই মুহূর্তে বিশ্বের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এটি অনেক দেশেই হচ্ছে। গণতান্ত্রিক হতে চায়, এমন কোনো দেশের ক্ষেত্রে তা সহায়ক বলেও তিনি মনে করেন না।

মিয়া সেপ্পো বলেন, নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য কার্যক্রম শুরুর চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে জাতিসংঘ। সেখানে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) সঙ্গে জাতিসংঘ কথা বলছে। তিনি বলেন, বিশ্বসম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন আফগানিস্তানের দিকে থাকায় রোহিঙ্গা সংকটের চ্যালেঞ্জ বেড়ে গেছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের।

অনুষ্ঠানে ডিকাব সভাপতি পান্থ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনুদ্দিন বক্তব্য দেন।

ইউকে/এএস