রাবি সংবাদদাতাঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে ‘আইন বহির্ভূতভাবে’ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এফএম আলী হায়দারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদ ফারুক হোসেন নামের ওই আইনজীবীর পাঠানো নোটিশে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে অধ্যাপক আলী হায়দারকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আইনজীব এই লিগ্যাল নোটিশের অনুলিপি রাবি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম, কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আব্দুল গণি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. মঞ্জুর হোসেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাররও প্রেরণ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত ‘রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব বায়োসায়েন্সেস (আরআইবি)’ তিনজন অংশীদারীর অংশীদারী কারবারের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে আসছে (যা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাশাপাশি এটি একটি আর্থিক তথা লাভজনক প্রতিষ্ঠানও বটে)। এই তিন অংশীদারের তথা মালিকানার একজন হলেন অধ্যাপক ড. আলী হায়দার। প্রতিষ্ঠানটির লভ্যাংশের ৩০ শতাংশ তিনি পান। অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী-বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক সরাসরি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকতে পারবেন না। এজন্য এই বিষয়ে জানতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ফারুক হোসেন অধ্যাপক আলী হায়দারকে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়- ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই রাবির অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার দুই বছরের জন্য আপনাকে (ড. আলী হায়দার) ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ (অবৈতনিক) প্রদান করেছিলেন (মেমো নং-৩১৪৮/১ই-৬০০৬/স.শা )। চলতি বছরের ২২ জুলাই আপনার দায়িত্বও শেষ হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আপনি রাবি কর্তৃপক্ষের এনওসি ছাড়া ইনস্টিটিউটের কোনো সভাতেই অংশগ্রহণ করতে পারেন না। কোনো সভায় রাখলে সেটি প্রতিষ্ঠানের বিধি মোতাবেক অবৈধ হবে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়- ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিয়োগ বোর্ড ও পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ড. হাফিজুর রহমানকে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী অধ্যক্ষ হিসেবে আরআইবির চেয়ারম্যান নিয়োগ প্রদান করেন (মেমো নং-আরআইবি/নিয়োগ/২০২১/০১)। অথচ গত ৭ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভা চলাকালে আপনার (ড. এফএম আলী হায়দার) নেতৃত্বে ইনস্টিটিউটটির স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. হাফিজুর রহমানের ওপর হামলা চালানো হয়।
এসময় আপনি (ড. আলী হায়দার) সভার রেজুলেশন বইসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং প্রতিষ্ঠানটির সাড়ে ৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। এ ঘটনায় ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ ভুক্তভোগী ড. হাফিজুর রহমান অভিযুক্ত শিক্ষক ড. এফএম আলী হায়দারকে প্রধান করে দুইজনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে ওইদিন বিকালে নগরীর মতিহার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয় ‘সরকারি কর্মচারি হিসাবে উপরোক্ত কর্মকান্ড রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৫৫ (৩) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
নোটিশে আরও উল্লেখ হয়েছে- আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। অথচ ২০১৯ সালের ২৩ মে আপনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের (আরআইবি) মালিকানার চুক্তিপত্রে (উক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশিদার হিসেবে) স্বাক্ষর করেছেন। অথচ সরকারি কর্মচারি (আচার) বিধি অনুযায়ী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩, অনুযায়ী- আপনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকা অবৈধ। এসব বিষয়ের জবার দিতে আপনাকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে জানতে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এফএম আলী হায়দারকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানটিতে আমি অনেক টাকা ডোনেট করেছি। এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়। আমার নিকট থেকে মালিকানা কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
ইউকে/এএস