রাবি সংবাদদাতা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৪ থেকে ৬ অক্টোবর। এবার এক লাখ ২৮ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। ফলে এ সময় রাজশাহীতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভর্তিচ্ছুদের অভিভাবকসহ প্রায় দেড় লাখ মানুষের সমাগম হবে। ভর্তি পরীক্ষার সময় ভর্তিচ্ছুদের অধিকাংশই ক্যাম্পাসের হলগুলোতে অবস্থান নেন। তবে এবার আবাসিক হল বন্ধ থাকায় তাদের তীব্র আবাসন সংকট মোকাবিলা করতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগের বছরগুলোতে ভর্তিচ্ছুরা এসে হলের কক্ষ, রিডিং রুম, মসজিদ, টিভি রুম, ডাইনিংসহ বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় থাকার সুযোগ পেত। কিন্তু এবার হল বন্ধ থাকায় সেসব সুযোগ একেবারে নেই। আবাসিক হল বন্ধ রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা শুরু হওয়ায় হলের শিক্ষার্থীরা এখন মেসে অবস্থান করছেন।
মেসের অধিকাংশ সিট এখন পূর্ণ। চাহিদার তুলনায় সিট কম হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই মেসগুলোতে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। তাই মেসগুলোতে ভর্তিচ্ছুদের জন্য জায়গা কমে গেছে। এছাড়া মহানগরীর বিভিন্ন হোটেলের ৮০ শতাংশ রুম আরও এক সপ্তাহ আগে থেকে বুকিং হয়ে গেছে। নতুন করে রুমের খোঁজ পাওয়া গেলেও ভাড়া কয়েকগুণ বেশি চাওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার ভর্তিচ্ছুদের থাকা নিয়ে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে।
রাজশাহী মহানগরীর মেস মালিক সমিতি ও হোটেল মালিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, মহানগরীতে সব মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার মেস রয়েছে। যেখানে এক লাখ ২০ হাজারের মত শিক্ষার্থী থাকতে পারেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালসহ বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হল ও হোস্টেল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা মেসে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে শহরের ছোট-বড় মিলিয়ে আবাসিক হোটেলের সংখ্যা ৬০ থেকে ৬৫টি। এতে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার মানুষকে রাখা সম্ভব। তবে প্রায় একমাস আগ থেকেই এসব হোটেলের রুম বুকিং দেওয়া শেষ হয়ে গেছে। প্রতিবছরই রাবির ভর্তি পরীক্ষার সময় হোটেলের একটি কক্ষের জন্য হাহাকার দেখা দেয়। এবারও কোনো হোটেলে রুম ফাঁকা নেই।
অতিথি রাখতে হোটেলের রুম খুঁজছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় আহমেদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। হল বন্ধ থাকায় মেসে অবস্থান করছি। আমার চাচা ও বোন পরীক্ষার জন্য রাজশাহী ৫ অক্টোবর আসবেন। তাদের জন্য শহরের বিভিন্ন প্রান্তে হোটেল খুঁজে কোনো রুম পাইনি। তাই নিজের মেসে চাচাকে রাখার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু বোনকে কোথায় রাখবো সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আফরিন লিজা বলেন, আমার এলাকা থেকে দুইজন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী আসবে। কিন্তু তাদের রাখার ব্যবস্থা করতে পারছি না। কারণ মেসের মালিক পরীক্ষার সময় কোনো অতিথিকে রাখতে দেবে না। রাজশাহী মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও মেস মালিক সমিতিদের বৈঠকে অতিথি রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানি। তবে তিনি সমিতির মধ্যে না থাকায় এটি মানতে নারাজ। ফলে তাদের থাকার বিষয় নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন আছি।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেস মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েতুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী সংখ্যার তুলনায় শহরে মেসের সংখ্যা এমনিতেই কম, তার ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বা হোস্টেলগুলোও বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় মহানগরীতে বাড়তি দেড় থেকে দুই লাখ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আসেন। এ অবস্থায় এত মানুষকে জায়গা দেওয়া কঠিনই হবে।
অতিথিদের বিষয়ে তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় মেসের প্রতিটি বর্ডার অতিথি রাখতে পারবেন। কিন্তু পরীক্ষার্থীর বাইরে অভিভাবকদের থাকার জন্য অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হবে। এই মূলত করা হয়েছে যাতে অভিভাবকরা কম আসেন। এছাড়া কোনো মেস অতিরিক্ত টাকা নিলে বা অতিথি রাখতে অসম্মতি জানালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এদিকে, ভর্তিচ্ছু নারী শিক্ষার্থীদের ছাত্রী হলে থাকার ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রী হলগুলোর রিডিং রুম, টিভি রুম, কমন রুমগুলোতে আগামী ৩ থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত নারী ভর্তিচ্ছুরা থাকতে পারবেন। তবে ছেলেদের জন্য আবাসনের কোন ব্যবস্থা করবে না প্রশাসন।
এই প্রশ্নে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নূর বলেন, রাজশাহী মহানগরীর হোটেলগুলোতে পাঁচ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ও অবিভাবকের থাকার ব্যবস্থা করা যাবে। এর বাইরে শহরের স্কুল বা কলেজের হোস্টেলগুলো ব্যবহার করতে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ রয়েছে। সেগুলা খোলার জন্য সংস্কারমূলক কাজ চলছে। ফলে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই হল খোলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে নারী অভিভাবক ও ভর্তিচ্ছুদের জন্য ছাত্রী হল খুলে বিভিন্ন ফ্রি স্পেস ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া টিচার্স ক্লাবের জুবেরী ভবন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে।
ইউকে/এএস