রাজশাহীর ১১টি মাধ্যমিক স্কুলের আটটিতেই নেই প্রধান শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী জেলায় ১১টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের ৮টিতেই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এই আটটির মধ্যে আবার দু’টিতে সহকারী প্রধান শিক্ষকও নেই। ফলে এ দুটি স্কুলে সহকারী শিক্ষকদের দিয়ে চলছে পাঠদান। যদিও জেলার স্কুলগুলোতে রয়েছে সহকারী শিক্ষকেরও সঙ্কট।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার স্কুলগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী পদশূন্য দীর্ঘ দিনের। ফলে একজন শিক্ষককে নিতে হয় ৫ থেকে ৬টি করে ক্লাস। এমনইভাবেই চলছে বেশির ভাগ সরকারি মাধ্যমিক স্কুল। সেই হিসেবে শহরের কয়েকটি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক পদ ঠিক থাকলেও রয়েছে কর্মচারীর পদ শূন্য। সম্প্রতি সরকারি মাধ্যমকি স্কুলের তথ্য চেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। রাজশাহীর শিক্ষা কর্মকর্তারা সেই তথ্য পাঠিয়েছেন।

সূত্র জানায়, রাজশাহী নগরের তিনটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক। এগুলো হলো- রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল, পিএন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়া জেলায় আটটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে নেই প্রধান শিক্ষক।

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে- রাজশাহী সিরোইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। একই অবস্থা গভ. ল্যাবরেটরী হাই স্কুল, রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও মোহনপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। এছাড়া ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে (বালক) প্রধান শিক্ষক নেই। তবে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক উভয়ই নেই ভবানীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং সারদা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। ।

কোন স্কুলে কত পদ শূণ্য:
রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (হেলেনাবাদ) প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ইসা বেলা সাত্তার জানান- ২০১৭ সালে প্রধান শিক্ষক তওহীদ আরা বদলি হয়ে সরকারি পিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। এর পরে আবার দুই মাসের জন্য তিনি এসেছিলেন। পরে আবার চলে যান পিএন স্কুলে। ফলে প্রধান শিক্ষকের পদ ফাঁকা রয়েছে গেছে। বর্তমানে সহকারী প্রধান শিক্ষক ইসা বেলা সাত্তার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া এই স্কুলটিতে সহকারী শিক্ষকের পদ ২৫টি। তার সবকটি শিক্ষকই রয়েছে। তবে কর্মচারীর পদ ৮টি থাকলেও রয়েছে ৪জন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী ৭৯২ জন।’

এছাড়া গভ. ল্যাবরেটরী হাই স্কুলেও নেই প্রধান শিক্ষক। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রধান শিক্ষক বদলি হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। বর্তমানে সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজনিন আহম্মেদ। তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান- ‘শিক্ষকের ২৫টি পদ পূরণ রয়েছে। কর্মচারীর ৫টি পদের চারটিই শূন্য। শিক্ষার্থী ৯০০ জন।

রাজশাহী সিরোইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শিশির কুমার উপাধ্যায় জানান, ‘শিক্ষকের ২৫টি পদ পূরণ রয়েছে। কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। বর্তমানে একজন অফিস সহকারী ও একজন অফিস সহায়ক রয়েছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯১০ জন।’

সারদা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ফারুক হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষক পদটি প্রায় ২ বছর থেকে নেই। তাই সহকারি প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তার জাহান প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে তিনিও চলতি বছরের ১২ মে অবসরে যান। এরপরে মূলত প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের এই দু’পদ শূন্য হয়।

অন্যদিকে ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চ (বালক) বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনসুর রহমান জানান- ‘৬ বছর (২০১৫) থেকে নেই প্রধান শিক্ষক। সর্বশেষ প্রধান শিক্ষক গুলসান আরা ছিলেন। তিনি ঢাকায় বদলি হয়ে যান। এরপর থেকে এই পদটি শূন্য রয়েছে। এছাড়া সহকারী শিক্ষকের পদ ১১টি। সেখানে রয়েছে ৬ জন। কর্মচারী চার জনের মধ্যে রয়েছে দুই জন।

তিনি আরো বলেন- সহকারী প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষক সঙ্কট থাকায় একজন শিক্ষকের ৬ টি পর্যন্ত ক্লাস নিতে হয়। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪৯৯ জন শিক্ষার্থী।’

ভবানীগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক সহকারী শিক্ষক জানান, ‘প্রধান শিক্ষক হিসেবে ড. মো. রুহুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত) ছিলেন। তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বদলি হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গেছেন। বর্তমানে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদও শূন্য। মোট শিক্ষকের পদ নয়টি। এর মধ্যে রয়েছে ৫টি। এছাড়া একজন ট্রেনিঙে রয়েছেন। চারজন কর্মচারীর মধ্যে রয়েছে মাত্র দুইজন। একজন অফিস সহায়ক ও একজন দারোয়ান।’

মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান- ‘সর্বশেষ প্রধান শিক্ষক ছিলেন- একেএম গোলাম আযম। তিনি মাত্র আড়াই মাস কর্মরত ছিলেন। এরপরে বদলি হয়ে যশোরে জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রায় ৫ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে স্কুলটি। সহকারী প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহিন। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য, সহকারী শিক্ষকের দুইটা পদ শূন্য, নিম্নমান সহকারীর পদ শূন্য। প্রধান শিক্ষকসহ মোট পদ ১৮টি। এর মধ্যে কর্মরত ১৫ জন। এছাড়া কর্মচারী ৫জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র একজন। সেটাও আবার নিরাপত্তা প্রহরী।’

মোহনপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন আবুল হুসাইন। তিনি সহকারী শিক্ষকের পদ ৫টি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৃষ্ঠ পদের বিপরীতে কোনো পদ শূন্য নেই। এই স্কুলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কোনো কর্মচারী নেই।

রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, আমাদের থেকে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোর শূন্য পদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। সেগুলো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা কার্যালয়ের রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিন সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ হয়নি। এছাড়া সহকারী শিক্ষক পদের নন ক্যাডারদের নিয়োগ হয়েছে। অতিদ্রুত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের নিয়োগ হবে।

ইউকে/এএস