রিং আইডিতে ধরা রাজশাহীর হাজারো গ্রাহক

নিজস্ব প্রতিবেদক: এমন আয়ের কথা ভাবা যায়! মাত্র ২২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন গ্রাহকের আয় ৫০০ টাকা! ১২ হাজার বিনিয়োগে ২৫০ টাকা! ইন্টারনেট পরিচালিত রিং আইডির এমন লোভনীয় ফাঁদে পড়ে বিনিয়োগ করে ধরা রাজশাহী অঞ্চলের হাজার হাজার গ্রাহক।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে রিং আইডি তাদের সকল কার্যকর্ম স্থগিত রেখেছেন। নতুন করে কেউ মেম্বার শিপ হয়ে বিনিয়োগ করতে পারছেননা। পাচ্ছেন না গ্রাহকরা পেমেন্টের টাকাও। এমন অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার গ্রাহক। তারা এখন প্রতিদিনই ধরনা দিচ্ছে রিং আইডির এজেন্টদের কাছে।

দেশে ইন্টানেট পরিচালিত ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ ধরা খাওয়ার পরে রিং আইডি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। কম সময়ে এবং সহজে মুনাফার আশায় রিং আইডিতে বিনিয়োগ করছেন অনেক গ্রাহক। চোখে-মুখে স্বপ্নের জাল বুনলেও শেষে অন্ধকার দেখছেন তারা।

জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে রিং আইডি ‘কমিউনিটি জবস মেম্বারশিপ’ চালু করে। মেম্বারশিপের মাধ্যমে এখানে বিনিয়োগ করে টাকা আয়ের সুযোগ দেয়া হয়। এজন্য বর্তমানে দুটি প্যাকেজ অফার রয়েছে। সিলভার মেম্বারশিপ ও গোল্ড মেম্বারশিপ। সিলভার মেম্বারশিপের মূল্য ১২ হাজার টাকা এবং গোল্ড মেম্বারশিপের মূল্য ২২ হাজার টাকা। মেম্বারশিপ পাওয়ার পর বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। ওই বিজ্ঞাপন যত গ্রাহক দেখেন ততো টাকা আয় হয়।

রাজশাহী জেলায় রিং আইডির এজেন্ট রয়েছে ১১টি। এসব এজেন্টের কাজ গ্রাহক তৈরি করা। প্রথমত দুই ধরনের গ্রাহক আছে। গোল্ড মেম্বারশিপ ২২ হাজার ও সিলভার মেম্বারশিপ ১২ হাজার টাকা। একজন এজেন্ট গোল্ড মেম্বারশিপ করতে পারলে রিং আইডির কাছে কমিশন পান প্রায় এক হাজার ৭০০ টাকা। সিলভার মেম্বারশিপের জন্য ৯৬০ টাকা কমিশন।

এমন অফারে বেশ অল্প সময়ে শহরের পাশাপাশি গ্রামের গ্রাহকের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হন প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতেই বিশ্বাস অর্জন করতে গ্রাহকদের বিকাশের মাধ্যমে কিছু গ্রাহকদের মুনাফাও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

আর বেশি মুনাফার আশাই সারা দেশের ন্যায় রাজশাহী জেলার গ্রামগঞ্জে রিং আইডিতে বিনিয়োগ করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ের হাজার হাজার নারী-পুরুষ।কেউ এনজিও ঋণ তুলেছেন কেউ বা বাড়ি থাকা গরু-ছাগল, হাঁস মুরগি বিক্রি করে রিং আইডিতে বিনিয়োগ করেছেন।

সর্বশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর রিং আইডি একটি নোটিশ প্রদান করেন যে আজ (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার মধ্যে মেম্বারশিপ গ্রহন করা হবে। পরে আর হবেনা। এমন নোটিশ দেখে হাজার হাজার গ্রাহক সেই ২৩ তারিখের মধ্যে মেম্বারশিপ নেন। এর মধ্যে রাজশাহীর তানোর উপজেলার প্রায় ৩০০ জন গ্রাহক মেম্বারশিপ নিয়েছেন। যা টাকার অংকে অর্ধকোটি টাকা।

মুণ্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে আরিফ ২৩ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ ১২ হাজার টাকায় সিলভার মেম্বারশিপ নেন। আরিফ জানান, রাজমিস্ত্রির কাজ করেন তিনি। বেশি মুনাফার আশায় তার জমানো ১২ দিয়ে সিলভার মেম্বারশিপ নিয়ে পরের দিন হতে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কি করবেন বুঝতে পারছেন না।

মুন্ডুমালা গ্রামের রায়হান নামের এক যুবক ২২ হাজার টাকা করে তিনটি ৬৬ হাজার টাকায় গোল্ড মেম্বার শিপ নেন ২ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে তিনি পেমেন্ট পেয়েছে ১২ হাজার টাকা। রায়হান জানান, তিনি এনজিও হতে ঋণ নিয়ে তিনটি মেম্বার শিপ নিয়েছিলেন। ২৩ তারিখ পরে প্রতিদিন স্থানীয় এজেন্টদের কাছে ঘুরছেন টাকা উঠানোর জন্য কোন লাভ হচ্ছেনা।

শুধু পাঁচন্দর গ্রামের আরিফ ও মুন্ডুমালা রায়হান নয়, এ এলাকার শতশত গ্রাহক রিং আইডি লোভনীয় ফাঁদে পরে বিনিয়োগ করে এখন পথে বসার উপক্রম। একাধিক গ্রাহক জানান, রিং আইডিতে বিনিয়োগ করাতে বেশি উৎসাহ করেছেন স্থানীয় এজেন্টেরা। কারণ তারা তাদের বেশি কমিশনের জন্য গ্রাম এলাকার অনেক সহজ সরল মানুষদের প্রলোভন দিয়ে মেম্বারশিপ করেছেন। এতে তাদের লাভের পাল্লা ভারি হয়েছে। এখন রিং আইডি বন্ধ হলে তারা দায় এড়াতে পারেননা।

গ্রাহকেরা আরো জানান, রাজশাহী জেলায় ১১টি এজেন্ট এর মধ্যে পবা উপজেলার এজেন্টের মালিক কুবাই আমিন রাজশাহী জেলায় প্রথম এজেন্ট গ্রহন করেন। কুবাই আমিন পবা উপজেলার দায়িত্বে থাকলেও আসলে তার বাড়ি তানোর উপজেলা মুন্ডুমালায়। এখন তিনি রিং আইডির রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ ডাইমন্ট এজেন্ট হিসাবে উপাধি পেয়েছেন। তার আওতায় প্রায় ৬ হাজার গ্রাহক রয়েছে। ২৩ তারিখ রিং আইডি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে গ্রাহকেরা জানান।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ ডাইমন এজেন্ট কুবাই আমিনের সাথে মোবাইল ফোনে শুক্রবার রাতে যোগাযোগ করা। তিন বার কল দেয়ার পরে রিসিভ করেন। তিনি দাবি করেন আর দুই মাসের মধ্যে রিং আইডি সমস্যা দুর হয়ে যাবে। এখন গ্রাহকেরা নগদ পেমেন্ট এর বদলে পণ্য পাবে বলে ফোন কেটে দেন।

ইউকে/এএস