দুয়ারে শারদীয় উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুয়ারে কড়া নাড়ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। হাতে মাত্র একদিন। এরপরই ভক্তকূলের জন্য দেবী দুর্গা আসছেন মর্ত্যলোকে। দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর বোধন ও মহাষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। পালবাড়িতে তাই ব্যস্ততার শেষ নেই। প্রতিমার গায়ে পড়েছে রঙ-তুলির শেষ আঁচড়; অলংকরণ ও সাজসজ্জা।

আশ্বিন বিদায় বেলায় শিউলি ফুলের মৌ মৌ গন্ধে যখন চারিদিক মাতোয়ারা। কাশফুলে শুভ্রতা ছড়িয়ে তখনই এসেছে শারদীয় দুর্গাপূজা। হিন্দু ধর্মালম্বিদের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে তাই এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এরই মধ্যে রাজশাহী মহানগর ও জেলার মণ্ডপগুলোতে সাজসজ্জার কাজ শেষে হয়েছে। অনেক মণ্ডপের উদ্দেশে পাঠানো শুরু হয়ে গেছে দুর্গা প্রতিমা।

সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী- এবার মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে গত ৬ অক্টোবর। ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। পরদিন ১২ অক্টোবর মহাসপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আচার অনুষ্ঠান। ১৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমী এবং ১৪ অক্টোবর মহানবমী পূজা। ১৫ অক্টোবর মহাদশমী বা বিজয়া দশমী হবে। এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পঞ্জিকামতে- দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে স্বর্গালোক থেকে পৃথিবীতে আসবেন। এর ফলে ঘটবে ফসল ও শস্যহানি। আর দেবী বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে। এর ফল হচ্ছে মড়ক। এতে অনুমান করা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে।

রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টি এলাকার প্রতীমা শিল্পী কার্তিক চন্দ্র পাল জানান, সময় কম, কাজ বেশি। এবার শুরু থেকে বৃষ্টি-বাদল লেগেই ছিল। এজন্য প্রতিমা তৈরীর পর শুকোতে সময় বেশি লেগেছে। না হলে রঙের কাজ আরও আগেই শেষ হয়ে যেতো। তার পরও কাজ শেষ। এখন কেবল শেষ মুহূর্তের রঙের কাজ চলছে। রঙ-তুলির শেষ আঁচড়ে পূর্ণতা আনা হচ্ছে প্রতিমায়।

তিনি আরও জানান, তার এখানে ২০ হাজার থেকে শুরু করে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমা আছে। ৮০ হাজারের দুইটি প্রতিমা আছে। বাকিগুলো ২০, ৩০, ৪০ হাজার টাকায় অর্ডার নিয়েছেন। আজকালের মধ্যেই এসব প্রতিমা সরবরাহ করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

রাজশাহী হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, রাজশাহীতে এবার ৪৫৬টি মণ্ডপে এবার শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৭৫টি পূজামণ্ডপ রয়েছে রাজশাহী মহানগর এলাকায়। আর বাকি ৩৮১টি মণ্ডপ রাজশাহীর ৯ উপজেলায়। দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে করতে এরই মধ্যে একটি প্রস্তুতি সভা করে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান- গত বছরের মতো এবারও মণ্ডপগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার মণ্ডপের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এখন মণ্ডপ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ কমিশনারের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশকিছু বিধিনিষেধও জারি করা হয়েছে।

এদিকে, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পূজা অর্চনাতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। পুরোহিত ও পূজারিদের বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। মণ্ডপে মণ্ডপে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান-পানির ব্যবস্তা রাথতে হবে। নিরাপত্তার জন্য মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় এবং প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বসানো হয়েছে একটি করে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহী হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি তপন কুমার সেন বলেন- ৬ অক্টোবর ছিল শুভ মহালয়া। সেদিনই ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্নের দিন। পূরাণমতে, শুভ মহালয়াতেই দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। সেদিনই দেবীর চক্ষুদান করা হয়। আগামী সোমবার (১১ অক্টোবর) মহাষষ্ঠীতে রাজমাহী মণ্ডপে মণ্ডপে উঠবে দশভুজা দেবী দূর্গা। এরপর দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল আনুষ্ঠানিকতা। প্রস্তুতি শেষ; কেবল উৎসবের অপেক্ষা।

ইউকে/এএস