রাবি শিক্ষকের পদোন্নতির আবেদন জালিয়াতির অভিযোগ

রাবি সংবাদদাতা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের সভাপতি শাহরিয়ার পারভেজ এর সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির আবেদনে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায়, সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদনের যোগ্যতার ক্ষেত্রে, অন্যান্য শর্তের সাথে একাধিক গবেষণা প্রবন্ধ “প্রকাশিত” থাকার শর্ত আছে। সে অনুযায়ী নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে “রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ” শীর্ষক জার্নালের ১১ নম্বর ভলিউম এর প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হবার পূর্বেই তার গবেষণার প্রবন্ধ দুইটি প্রকাশিত দেখিয়ে তার ভূয়া কপি উক্ত আবেদনপত্রের সঙ্গে যুক্ত করেছেন বলে জানা গেছে।

জার্নালের ১১ নং ভলিউমটি প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হওয়ার আগেই ঐ ভলিউমের দুইটি গবেষণা প্রবন্ধ রাজশাহীর রাণীবাজারস্থ সরকার প্রিন্টিং প্রেস থেকে বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে ট্রেসিং পেপারের জন্য প্রস্তুতকরা কম্পিউটার কম্পোজ কপি সংগ্রহ করে আবেদনপত্রের সাথে জমা দেন ওই শিক্ষক। শাহরিয়ার পারভেজ তার বিভাগীয় সভাপতির পদকে ব্যবহার করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন বিভাগের একাধিক প্রভাবশালী প্রফেসরের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জার্নালের এডিটর-ইন-চিফসহ এডিটরিয়াল বোর্ডকে প্ররোচিত করে জানালের প্রকাশ কাল “আগস্ট ২০২১” করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, শাহরিয়ার পারভেজ ২০০৯ সালের ৩০ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। বর্তমানে আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত আছেন। চলতি বছরের মার্চে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেন তিনি। গবেষণা প্রবন্ধ “অপ্রকাশিত” থাকায়, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান তার পদোন্নতির আবেদনপত্রটি নামঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে একই গবেষণা প্রবন্ধ কার্যত অপ্রকাশিত থাকলেও তা প্রকাশিত দেখিয়ে ও তার ভূয়া কপি মূল আবেদনপত্রে সংযুক্ত করে পুনরায় জমা দেন চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু জার্নালের ১১ নং ভলিউম এখনো প্রকাশ হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা।

এ বিষয়ে আইন বিভাগের একাধিক এডিটরিয়াল বোর্ডের সদস্য ও আইন বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, চলতি বছরের আগস্ট মাসে আইন বিভাগ থেকে “রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ” ভলিউম ১১ শীর্ষক কোন জার্নাল প্রকাশিত হয়নি। সেটি এখনো প্রেসে আছে।

উল্লেখ্য, আইন বিভাগ “রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ” শীর্ষক জার্নালের ৯ নং ভলিউম থেকে পরবর্তি সব প্রকাশনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেয়। সে অনুযায়ী ওয়েবসাইটে তা প্রকাশও করা হয়। কিন্তু এই নিউজ লেখা পর্যন্ত চলতি বছরের আগস্ট মাসে প্রকাশিত বা “রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ” শীর্ষক জার্নালের ১১ নং ভলিউমটি সেখানেও পাওয়া যায়নি।

আইন বিভাগের একাধিক শিক্ষক বলেন, জার্নালের সর্বশেষ ১০ নং ভলিউম ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

তাদের মতে, “অপ্রকাশিত” কোন গবেষণা প্রবন্ধকে “প্রকাশিত” বলে পদোন্নতির আবেদনপত্রে উল্লেখ করা এবং এমন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তড়িঘড়ি করে পদোন্নতিকে ত্বরান্বিত করার চেষ্টা, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুযায়ী নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধের সামিল।

এদিকে, আগামী ১৬ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক মোঃ শাহরিয়ার পারভেজ-এর সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণের দিনও ধার্য করেছে বলে জানা গেছে।

তাই অবিলম্বে এই জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করে শাহরিয়ার পারভেজ এর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের সভাপতি শাহরিয়ার পারভেজ এর সঙ্গে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ইউকে/এএস