সবচেয়ে বড় দীঘি খননে ১৫ লাখ শ্রমিক!

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন:বিশাল এক দিঘী। এপাড় থেকে ওপাড় দেখা যায় না সহজে। চারপাশে গাছ-গাছালিতে ভরা। মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর চারদিক। রোদের আলোয় পুকুরের পানি ঝলমলিয়ে ওঠে। বলছি দেশের অন্যতম এক পুকুর রামসাগরের কথা। নাম শুনেই নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন, কতটা বড় এই দিঘীটি! রামসাগর দিঘী হিসেবেও পরিচিত এটি।

দিনাজপুর শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে তাজপুরে এই দিঘীর অবস্থান। রামসাগরের মোট আয়তন ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩১ মিটার। দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। রামসাগরের গভীরতা প্রায় ১০ মিটার। নিচ থেকে পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার।

দীঘির চারপাশের প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কের দুই ধারে লাগানো হয়েছে দেবদারু, ঝাউ ও মুছকন্দ ফুলের গাছ। পুকুরের পানি কিছুটা নীলাভ বর্ণের। দেশের অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান হলো রামসাগর। প্রতিদিনই সেখানে দর্শনার্থীদের আনাগোনায় মুখর থাকে।

তবে অন্য দিনের তুলনায় শুক্রবারে দর্শনার্থী থাকে বেশি। রামসাগর দিঘীকে কেন্দ্র করে আছে একটি মনোরম রামসাগর জাতীয় উদ্যান। এ ছাড়াও পূর্ণ চাদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে রামসাগরের পাড়ে ক্যাম্পিং খুবই রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেয়।

রামসাগর জাতীয় উদ্যানে আছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। যেখানে আছে- হরিণ, বানর, অজগর। শিশুদের জন্য আছে একটি শিশুপার্ক। ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে প্রচুর জায়গা।

পিকনিক পার্টির রান্না ও বাস পার্কিং এর জায়গা। পরিত্যক্ত একটি পুরনো মন্দির আছে। আছে অন্যপাশে একটি নতুন মন্দিরও। তবে মন্দিরটি কে কখন বানিয়েছেন আর কখন পরিত্যক্ত হয়েছে কোনো তথ্য দেওয়া নেই।

রামসাগরের ইতিহাস

জানা যায়, দিনাজপুরে প্রাণনাথ নামে এক রাজা ছিলেন। দেশজোড়া ছিল তার খ্যাতি। অফুরন্ত ধনসম্পদ ছিল তার ভান্ডারে। তবে সুখ অচিরেই তার হাতের বাইরে চলে যায়। ১৭৫৭ সালের খরায় খাল-বিল, দিঘি-নালা শুকিয়ে কাঠ। প্রজাদের জলকষ্ট দেখে রাজা সিদ্ধান্ত নেন গভীর দিঘী খননের। যাতে করে সহজে পানি শুকিয়ে না যায়।

যেই কথা সেই কাজ! ১৫ লাখ শ্রমিক ১৫ দিনের মধ্যে খনন করে এই বিশাল দিঘী! ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল এই দিঘী খনন করতে। তবে গভীর হলেও তখন দিঘীতে পানির দেখা যায়নি তখন। এমন সময় রাজা স্বপ্নাদেশ পেলেন যে তার যুবরাজ রামকে পুকুরে বলি দিলে পানি উঠবে।

যুবরাজ রাম প্রজাদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ দিতে প্রস্তুত হলেন। যুবরাজের নির্দেশে পুকুরের মাঝখানে নির্মাণ করা হয় মন্দির। একদিন যুবরাজ হাতির পিঠে চরে পুকুরের উদ্দেশে নিজের জীবন উৎসর্গ দিতে বের হন। পুকুর পাড়ে পৌঁছে যুবরাজ রাম সিঁড়ি বেয়ে ওই মন্দিরে নেমে যান।

হঠাৎ পানিতে ভরতে থাকে দিঘী। আর ডুবে যান যুবরাজ। অলৌকিকভাবে পানিতে ভেসে থাকলো শুধু যুবরাজের সোনার মুকুট। সেই থেকে পুকুরের নামকরণ করা হলো রামসাগর। ইতিহাস সূত্রে আরও জানা যায়, ১৭৫০ সালে দিনাজপুরের রাজা রামনাথ পুকুরটি খনন করেন। তার নামানুসারেরই পুকুরের নামকরণ করা হয় রামসাগর।

১৯৬০ সালে রামসাগর বনবিভাগের আওতায় আনা হয়। ১৯৯৫-৯৬ সালে সরকার এটিকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল তৎকালীন সরকার রামসাগরকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা দেয়।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী যেকোনো বাসে চড়ে যেতে হবে দিনাজপুর। সেখান থেকে রামসাগরে যাওয়ার জন্য কোনো বাস সার্ভিস নেই। রিকশা ও টেম্পুই একমাত্র ভরসা। ভাড়া পড়বে ৩০/৪০ টাকার মতো।

থাকবেন কোথায়?

রামসাগরে একটি ডাকবাংলো আছে। সেখানে থাকতে হলে স্থানীয় বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হয়। তবে অনুমতি সাধারণত দেয়া হয়না। এটা সরকারী কর্তারা ছাড়া কেউ থাকতে পারেনা বললেই চলে।

দোতলা ভবনটিতে তিনটি সাধারণ এবং একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ আছে। প্রতিটি সাধারণ কক্ষের ভাড়া প্রতি রাত ৫০০ টাকা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভাড়া এক হাজার টাকা। ডাক বাংলোর সামনে খাবারের দোকান আছে।

ইউকে/এসএম