নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহীতে এবার সাত দিনের সর্বোচ্চ ‘লকডাউন’ শুরু হয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ শুক্রবার (১১ জুন) বিকেল ৫টা থেকে এই বিশেষ লকডাউন কার্যকর করা হয়। লকডাউন কার্যকরের পর বিকেলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক নিজেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
এ সময় রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। রাজশাহী মহানগর পুলিশের বিভিন্ন জোনের উপ-কমিশনার, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এবং সহকারী কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, প্রথম দিন বিশেষ লকডাউন কার্যকরের পর পুরো মহানগর এলাকায় সুনশান নিরাবতা নেমে এসেছে। রাজশাহী মহানগরীর তিনটি প্রবেশ মুখ এরই মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করেছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি প্রথম দিন র্যাব সদস্যরাও বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে। এর পাশাপাশি মাঠে রয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতও। আর উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা লকডাউন পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন। সার্বিক পরিস্থিতি দেখভাল করছেন- রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল।
এর আগে রাজশাহী জেলায় ‘বিশেষ লকডাউন’র আদলে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার (১১ জুন) বিকেল ৫টা থেকে ১৭ জুন মধ্যরাত (১২টা পর্যন্ত) এক সপ্তাহের জন্য এ বিশেষ লকডাউন কার্যকর থাকবে। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) রাতে রাজশাহী সার্কিট হাউজে এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলায় করোনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ও মৃত্যু হার বিশ্লেষণ শেষে বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর বলেন- রাজশাহীতে ফের সংক্রমণের হার বেড়েছে। তাই পাশের ভারত সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর এবার রাজশাহী জেলায়ও বিশেষ লকডাউন জারি করা হলো। আর করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল এ বিশেষ লকডাউনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, রাজশাহীতে প্রথমে সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তারপর গত ২ জুন আরও দুই ঘণ্টা এগিয়ে বিকেল ৫টা থেকেই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এই ক’দিন আমরা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। কোথাও করোনার নিম্নমুখী সংক্রমণ, কোথাও ঊর্দ্ধমুখী। কিন্তু ঊর্দ্ধমুখী সংক্রমণই বেশি। তাই শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত রাজশাহীতে বিশেষ লকডাউন থাকবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো আব্দুল জলিল জানান, লকডাউনের সময় সব ধরনের ব্যবসায়ীক দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁসহ আশপাশের অন্য কোনো আন্তঃজেলা থেকে যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। রাজশাহী থেকেও কোনো যানবাহন বাইরের জেলায়ও যেতে পারবে না। এছাড়া রাজশাহী থেকে ঢাকাসহ সব দূর পাল্লার রুটের বাস ও অন্যান্য যানবাহন এবং যাত্রীবাহী সকল আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রাজশাহীর আম পরিবহনকারী ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ এবং পণ্যবাহী ট্রেন আগের মতই চলবে। এছাড়া রোগী, খাদ্য, ওষুধ ও পণ্যবাহী পরিবহনসহ অন্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং জরুরি ওষুধ সরবরাহকারী পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ বিশেষ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
রাজশাহীতে আমের মৌসুম চলছে। তাই আমের বাজারগুলো এখন বড় পরিসরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার পরিচালনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইউকে/এসই/এসএম