সুখী ও সমৃদ্ধশীল দেশের প্রত্যয়ে রাজশাহীতে উদযাপন হচ্ছে বিজয় দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক: মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সুখী, সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে রাজশাহী উদযাপন হচ্ছে মহান বিজয় দিবস।সুবর্ণ জয়ন্তী পেরিয়ে নতুন সম্ভাবনায় বিস্তৃত এই দেশকে আরও সমৃদ্ধশালী করার দীপ্ত শপথ নিচ্ছে সবাই। তাই এবছরও অনেকটা ভিন্ন আবহেই মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হচ্ছে- বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির সূর্য সন্তানদের স্মরণ করছে রাজশাহীর মানুষ। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যেদিয়ে রাজশাহীতে উদযাপন করা হচ্ছে- বিজয়ের ৫১ বছর।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সূর্যোদয়ের পর রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে ৩১ বার তোপধ্বনি করা হয়। এর মধ্যেদিয়ে রাজশাহী মহানগরে বিজয় দিবস উদযাপন শুরু হয়।

দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য সব আয়োজনে রাজশাহীবাসী যেমন মেতেছেন বিজয়ের আনন্দে, তেমনি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন- একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের। বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরেই রাজশাহী মহানগরীর প্রতিটি শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নামে।

রাজশাহী মহানগরীর ভুবনমোহন পার্ক শহীদ মিনার ও রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

পরে সকাল সাড়ে ৭টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন- বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রথমেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন- বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফর উল্লাহ্। এরপর রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুল বাতেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মো.আবু কালাম সিদ্দিক, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এছাড়াও এখানে পুলিশের রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রেঞ্জ এবং জেলা আনসার, বনবিভাগ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও ডাকবিভাগসহ বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এর আগে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে ঐতিহাসিক ভুবন মোহন পার্ক শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। পরে সেখানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এছাড়া এ সময় দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

এদিকে, সকাল ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফর উল্লাহ্ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পর তিনি সেখানে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের মাধ্যমে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়।

বেলা ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা এবং জাতির পিতার সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিকেল সাড়ে ৩টায় রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুলে নারীদের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৪টায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে রাজশাহী সিটি করপোরেশন বনাম বিভাগীয় কমিশনার একাদশ প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা ৬টায় কালেক্টরেট মাঠে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।

আজ  সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্ক, জাদুঘর বিনা টিকিটে শিশুদের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চলচিত্র প্রদর্শণী ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র বিনা টিকিটে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। মহানগরীর সব মসজিদে বাদ জোহর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে সকালে বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা করেছে রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠন। এছাড়া সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। রাতে রাজশাহীর সকল সরকারি ভবনে শোভা পাচ্ছে রঙিন আলোকসজ্জা।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ সব সরকারি হাসপাতাল, শিশুসদন ও রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বিজয় দিবস উপলক্ষে পরিবেশন করা হচ্ছে উন্নতমানের খাবার।

ইউকে/এএসএম