বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা আন্তর্জাতিক সব সমালোচনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতে যাচ্ছে রাশিয়া। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও তা অস্ত্র বেচাকেনায় কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে হচ্ছে না।
যার প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের সাম্প্রতিক রাশিয়া সফরে। এই সফরে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও বলিষ্ঠ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে দেশ দুটি।
সোমবার মস্কোয় এক আলোচনায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা মিন অং হ্লাইং এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি নিকোলাই পাত্রুশেভ নিজেদের সম্পর্ক বাড়াতে একমত হয়েছেন। বৈঠকে মিন অং নিজ দেশকে সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দক্ষিণ এশিয়া-অঞ্চলে রাশিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত কৌশলগত অংশীদার বলে উল্লেখ করেন।
এর আগে একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে গত রোববার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে পৌঁছান মিন অং। ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের পর এটি তার দ্বিতীয় বিদেশ সফর। মিন অং হ্লাইং রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা স্পুটনিককে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, আমাদের বিদ্যমান সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবো। শুরু থেকেই আমাদের সামরিক সহযোগিতার সম্পর্কটি আমরা এমনভাবে তৈরি করেছিলাম, যেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও সম্প্রসারণ করা যায়।
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং যুদ্ধ জাহাজ কিনবে মিয়ানমার
স্পুটনিকের প্রতিবেদনে জানা গেছে, এই বৈঠেক সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ ও আগ্রহের ভিত্তিতে মিয়ানমারের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমারের প্রতি বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো স্বার্থন্বেষী দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রক্ষিতে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা উচিত বলে মনে করেন মিন অং।
রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো সিরিয়া, নাগোর্নো কারাবাখ, লিবিয়ার মতো সাম্প্রতিক যুদ্ধেক্ষেত্রগুলোতে বেশ অকার্যকর প্রমাণিত হলেও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া-চীন ছাড়া মিয়ানমারের সামনে আর কোনো দরজা খোলা নেই।
রাশিয়ান জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান একে বারস শিপবিল্ডার্স স্পুটনিককে জানিয়েছে, আসিয়ানভুক্ত একটি দেশ (মিয়ানমারও আসিয়ান ভুক্ত একটি দেশ) তাদের কাছ থেকে চারটি ‘প্রজেক্ট ২২১৬০’ টহল জাহাজ বা পেট্রল শিপ কিনছে, যার মধ্যে দুটি জাহাজ সংশ্লিষ্ট দেশে তৈরি করা হবে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের এ সফরে মাত্র দুই দিন আগে ১৮ জুন শুক্রবার মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে একটি প্রস্তাব পাস করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। রাশিয়া এই প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।
মিয়ানমার প্রধানের সফরের প্রতিবাদ
এদিকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারকে বৈধতা দেওয়ায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। ক্ষমতা দখলকারী সামরিক সরকারের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি অব্যাহত রাখা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। সোমবারের বৈঠকে রাশিয়ার পক্ষ থেকেও মিয়ানমারের বেসামরিক নাগরিক নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় মস্কো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। যদিও দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেও সম্মত হয়েছেন তারা।
‘জাস্টিস ফর মিয়ানমার’ এই সফরের নিন্দা জানিয়ে রাশিয়া সংবাদ মাধ্যমগুলোতে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানায়, মিন অং হ্লাইং একজন যুদ্ধাপরাধী, যিনি মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সহিংসতা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। তার রাশিয়া সফর নিয়ে আমরা হতাশ। রাশিয়া তাকে আমন্ত্রণের মাধ্যমে জন আকাঙ্ক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করে ক্যুর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকেই যেন বৈধতা দিল।
ইউকে/এএস