বিশেষ প্রতিবেদক: করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) প্রতিদিন রোগীর চাপও বাড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি অধিকাংশ রোগীই ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়্যান্টে আক্রান্ত। এসব রোগীদের অক্সিজেনের মাত্রা হঠাৎ ৮০ শতাংশের নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে প্রত্যেককে অক্সিজেন সার্পোট দিতে হচ্ছে। এতে হাসপাতালে প্রতিদিন অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছেই। এক মাসের ব্যবধানে এ হাসপাতালে প্রতিদিনের অক্সিজেনের চাহিদা আরও প্রায় তিন হাজার লিটার বেড়েছে।
রামেকে গত এক মাস আগে গড়ে প্রতিদিন অক্সিজেন লাগতো পাঁচ হাজার লিটার। বর্তমানে রোগীদের পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন হচ্ছে গড়ে আট হাজার লিটার। এক মাসের ব্যবধানে অক্সিজের চাহিদা বেড়েছে প্রায় তিন হাজার লিটার। এতে রোগীদের সঠিক মাত্রায় অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে কর্তৃপক্ষের।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ১৪টি ওয়ার্ডে ৪৫৪ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিলেন ৪৮৯ জন। প্রত্যেক রোগীকে অক্সিজেন সার্পোট দিতে হচ্ছে। অক্সিজেন লাইন প্রতিটি শয্যায় না থাকায় অনেকেই বাইরে থেকে সিলিন্ডার কিনে নিয়ে গিয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত মে মাসে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছিলেন ৮০৮ জন। অন্যদিকে জুন মাসে রোগী ভর্তি হয়েছিলেন এক হাজার ৩৯৭ জন। এক মাসের ব্যবধানে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে প্রায় দ্বিগুণ রোগী বেড়েছে। ফলে অক্সিজেন চাহিদাও বেড়েছে দ্বিগুণ।
এদিকে রামেক হাসপাতালে করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ১৯ জনের মধ্যে চারজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর ১৫ জন ভর্তি ছিলেন উপসর্গ নিয়ে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে রাজশাহী জেলারই ১০ জন রোগী রয়েছেন। এছাড়া একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার, নাটোর জেলার দু’জন, নওগাঁ জেলার দু’জন। এছাড়া পাবনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও জয়পুরহাটের একজন করে রোগী ছিলেন।
মৃতদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ ও নারী ছয়জন। এদের মধ্যে ১১ জনের বয়স ৬১ বছরের ওপরে। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন ও ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন।
রামেক হাসপাতালে এ ছয় দিনে মোট ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত জুনে ৪০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ রোগী ছিলেন ১৮৯ জন। অন্যরা করোনা উপসর্গ নিয়ে এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এদিকে প্রতিদিন তিনটি ট্রাক হাসপাতালে তরল অক্সিজেন সরবরাহের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এ তরল অক্সিজেন ভ্যাপোরাইজার দিয়ে বাষ্পীভূত করা হচ্ছে। তা পাইপের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে চলে যাচ্ছ। ওয়ার্ডের রোগীর শয্যার পাশে অক্সিজেন পোর্ট তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতালে যেভাবে রোগী বাড়ছে তাদের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করাটাই একটি চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, একজন রোগীর অনেক অক্সিজেন লাগছে। এজন্য অনেক সিলিন্ডার দরকার হচ্ছে। এখন অক্সিজেন সরবরাহ আরও নিরবচ্ছিন্ন রাখতে নতুন অক্সিজেন ‘ভ্যাপোরাইজার’ লাইন লাগানো হয়েছে। রামেক হাসপাতালে আসা যাদের অক্সিজেন লেভেল ৯০-এর নিচে নামলেই শুধু ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে শুধু তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। বাকিদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসার জন্য বলা হচ্ছে।
জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, গত এপ্রিল মাসের শুরু আমাদের প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হতো। এক মাস আগে এ চাহিদা ছিল সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার লিটার। এখন সেটি গিয়ে ঠেকেছে প্রায় আট হাজার লিটারে। আমরা প্রতিদিন জাতীয় অক্সিজেন সরবরাহ ডিপো থেকে ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন পাচ্ছি। চাহিদার চেয়ে বেশি থাকায় আমরা কিছু অক্সিজেন রিজার্ভ রাখতে পারছি। কিন্তু যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে বিষয়টি নিয়ে ভাবিয়ে তুলছে আমাদের।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন বলেন, এতদিন একটি ভ্যাপোরাইজারের মাধ্যমে তরল অক্সিজেন বাষ্পীভূত করে পাইপে ঢোকানো হচ্ছিল। কোনো কারণে লাইনে ত্রুটি হলে দু-এক মিনিটের মধ্যে বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। এজন্য চলমান লাইনটা বন্ধ না করে বাইপাস করে আরেকটি নতুন ভ্যাপোরাইজার লাগানো হয়েছে। কিন্তু এর বেশি রোগী এলে তা আবার এ অবস্থা দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
ইউকে/এসএম