পান্তাভাতে বাজিমাত কিশোয়ার চৌধুরীর

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: গ্রামবাংলার আবহমানকালের খাবার পান্তাভাত আর আলুভর্তা পরিবেশন করে অস্ট্রেলিয়ায় বাজিমাত করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী। সেখানকার রান্নাবিষয়ক জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় তৃতীয় স্থান (দ্বিতীয় রানার আপ) অধিকার করেছেন তিনি।

এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন জাস্টিন। তিন মাস ধরে চলা এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফল গতকাল মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়। চ্যাম্পিয়ন বাড়ি ফিরছেন প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা পুরস্কার এবং মাস্টার শেফ অস্ট্রেলিয়ার ২০২১ সালের খেতাব নিয়ে। তৃতীয় হয়ে কিশোয়ার পেয়েছেন প্রায় ১৩ লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী পিট ক্যামবেল জিতেছেন প্রায় ২০ লাখ টাকা।

দুই দিন ধরে চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় জাস্টিন, পিট ও কিশোয়ার—এই তিন ফাইনালিস্টকে নিয়ে। প্রথম দিন ফাইনাল ডিশে কিশোয়ার রান্না করেন ‘স্মোকড ওয়াটার রাইস’, আলুভর্তা ও সার্ডিন। অর্থাৎ বাঙালির কাছে চিরচেনা পান্তাভাত, আলুভর্তা আর সার্ডিন মাছ ভাজি।

ফাইনাল ডিশ রান্না নিয়ে কিশোয়ার বিচারকদের বলেন, প্রতিযোগিতায় এমন রান্না সত্যি চ্যালেঞ্জের। সাধারণ রেস্টুরেন্টে এমন রান্না হয় না। কিন্তু বাঙালির কাছে এটা পরিচিত রান্না। আর ফাইনাল ডিশ হিসেবে এটা রেঁধে নিজের তৃপ্তির কথাও জানান কিশোয়ার। এই রান্না দেখে ও খেয়ে বিচারকরা রীতিমতো অভিভূত হয়ে পড়েন। তিনজনই দশে দশ দেন কিশোয়ারকে।

দুই দিনের গ্র্যান্ড ফিনালের প্রথম দিনে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন কিশোয়ার। অন্যদিকে ৫৩ পয়েন্টে শীর্ষে ছিলেন পিট আর ৫০ পয়েন্টে তৃতীয় ছিলেন জাস্টিন। দ্বিতীয় দিন শেষে ১১৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে থেকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় কিশোয়ারকে। অন্যদিকে পিটও শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারেননি। তিনি ১২৪ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। তাঁর চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট বেশি পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হন জাস্টিন।

কিশোয়ারের জন্য চূড়ান্ত পর্বের শুরুটা; কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল। তিনি হাঁসের একটি পদ রান্না করা শুরু করেছিলেন। বিচারকরা তাঁর রান্না দেখতে এসে সব কিছু দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘এখানে কিশোয়ার কোথায়?’ তার পরই তিনি তাঁর মেন্যু চেঞ্জ করার চিন্তা করেন আর ফাইনাল ডিশ হিসেবে পরিবেশন করেন বাঙালির চির পরিচিত আলুভর্তা, পান্তাভাত আর সার্ডিন মাছ, যেই মাছের স্বাদ অনেকটা ইলিশ মাছের কাছাকাছি। চূড়ান্ত পর্বে ফাইনাল ডিশ রেঁধে ৫১ নম্বর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন, প্রথম স্থানে ছিলেন পিট ৫৩ নম্বর নিয়ে।

তবে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল রেজাল্টের আগেই লাখ লাখ বাঙালির মন জয় করে নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় কয়েক পদের রান্নার ভিডিও; আর সঙ্গে পরিচিতি পেয়ে যান এসবের রাঁধুনি। লাউ চিংড়ি, বেগুনভর্তা, খিচুড়ি, মাছ ভাজা, আমের টক, খাসির রেজালা—মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একের পর এক এমন মুখরোচক খাবার রান্না করে বিচারকসহ বিভিন্ন ভাষাভাষীর দর্শকের নজর কাড়েন এই শেফ।

কিশোয়ার চৌধুরী একজন বিজনেস ডেভেলপার, পারিবারিক প্রিন্টিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন তিনি। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ায় হলেও তাঁর পারিবারিক আবহটা সব সময়ই ছিল বাঙালিয়ানা। কথায় কথায় জানালেন, তাঁর বাবার বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরের আর মা কলকাতার বর্ধমানের। তাঁরা দুজনে প্রায় ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। তবে বিদেশে বসবাস করলেও নিজের দেশের ভাষা, সংস্কৃতিচর্চা সব কিছুই বজায় রেখেছেন কিশোয়ারের মা-বাবা; আর সেটা তাঁরা নিজের সন্তানদেরও ধারণ করতে উৎসাহিত করেছেন।

কিশোয়ার বলেন, ‘আমাদের বাসার ভেতরে শুধু রান্না না, বাজারটা কোথা থেকে আসে, কোন ইনগ্রেডিয়েন্ট কোথা থেকে কিনি, সেগুলোও সব সময় দেখানো হয়েছে আমাদের। আমাদের বাগানে হার্বস থেকে শুরু করে শাক-সবজি মরিচ-লাউ সব কিছুই আমরা নিজেরা উৎপাদন করি। ছোটবেলা থেকে আমাদের মা-বাবা এসব কাজে আমাদের সম্পৃক্ত করেছেন।’ এই কারণে কখনো মনে হয়নি যে হঠাৎ করে তিনি রান্না শুরু করেছেন। সূত্র : বিবিসি।

ইউকে/এএস