করোনা দূরে ঠেলে জমজমাট রাজশাহীর পশুর হাট

নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) থেকে দেশব্যাপী ‘লকডাউন’ শিথিল করা হয়েছে। আর শুরুতেই মানুষে জমজমাট হয়ে উঠেছে রাজশাহীর পশুর হাট।

সকাল থেকেই রাজশাহী মহানগরের ‘সিটিহাট’ পশুর হাটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাটে কেনাবেচার নির্দেশনা দিলেও কোনো হাটেই তা মানা হচ্ছে না।

সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই এ হাটে। সংক্রমণের শঙ্কা থাকলেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের কেউই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। হাট কমিটির পক্ষ থেকে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানার নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা খুব একটা কাজে আসতে দেখা যায়নি। ফলে করোনার উচ্চ সংক্রমণের এ সময়ে বিষয়টি মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি করছে।

হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা ও ইজারাদারদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, এবার দেশি-বিদেশি বড় আকৃতির গরু যেমন উঠেছে তেমনি মাঝারি ও ছোট সাইজের গরুও উঠেছে। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বাজারে গরু উঠেছে অনেকটা কম। আবার গরুর দামও তুলনামূলকভাবে বেশি। মাঝারি আকারের গরু কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। তবে বড় আকারে গরু কিনতে হলে ১ লাখ ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে এবার। তারও বড় গরুর দাম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত হাঁকছেন বিক্রেতারা।

রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জনসমাগম করে চলছে বেচাকেনা। সারি সারি করে গরু সাজানো। পাশে মানুষের দীর্ঘ লাইন। মাঝে মধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতার জটলা দেখা যাচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা একে অপরের গা ঘেঁষে গরু বেচাকেনা করছেন। হাটে আসা জনতার মধ্যে দেখা গেছে বেশিরভাগ মাস্ক থুঁতনির নিচে পড়ছে।

অনেকে আবার কানে ঝুলিয়ে রেখেছেন মাস্ক। হাটের এক পাশে বসেছে চা-পানের দোকান। সেখানে অবাধেই চা খাওয়া-দাওয়া ও ধূমপান হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার হ্যান্ড মাইকে মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কারও সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। যে যার মতো গরু কেনাবেচায় ব্যস্ত।

গরু কিনতে আসা মহাগরের পদ্মা আবাসিক এলাকার শফিকুল আলম বলেন, আজকে গরু কিনতে পারলাম না। আজ বাজারের গরু দেখে পছন্দ হচ্ছে না। তাছাড়া মাস্কবিহীন অনেক লোক দেখতেছি। তাদের মধ্যে যেতে ভয় পাচ্ছি। যদি করোনা আক্রান্ত হই। যত দিন যাবে তত বেশি ভিড় হবে।

শিশু সন্তানকে নিয়ে নগরের হেতেম খাঁ এলাকা থেকে হাটে গরু কিনতে এসেছেন আবু রায়হান। তিনি বলেন, আজকের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা কম। দাম ধরে মিললে আজকে গরু কিনে ফেলব। হাটে কোনো স্বাস্থ্যবিধি নেই। মানুষের সঙ্গে মানুষ গা ঘেঁষে আছে। হাটের পাশের চা দোকানগুলোতে প্রচণ্ড ভিড়। হাট চলাকালীন মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

কাটাখালী থেকে তিনটি গরু নিয়ে এসেছেন খামারি আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, গরুপ্রতি ৮০ হাজার টাকা চেয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকা দাম উঠেছে। ভালো দাম না পেলে বিক্রি করব না। এখানে সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব না। আমার গরুগুলো বিক্রি হলেই আমি খুশি।

স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি হাটের অন্যতম ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করতে আমরা বারবার মাইকিং করছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলছি। মাস্ক ও স্যানিটাইজার আছে। যে কেউ চাইলেও নিতে পারবে। কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করছি।

হাটে মহানগরের শাহ মখদুম থানার বুথ বসানো হয়েছে। সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন থানার পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান মনি। তিনি বলেন, পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য হাটে দায়িত্ব পালন করছেন। সামজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আমরা সর্বাত্বক চেষ্টা করছি।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরিফুল হক বলেন, আমাদের আজকে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা আছে। সেখানেই কোরবানির হাটের অবস্থা নিয়েও আলোচনা হবে। তারপরেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

ইউকে/এএস