নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে এবার অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাকাটাতেই বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। শহর থেকে গ্রামে-গঞ্জে ডেল্টা ভেরিয়্যান্ট (ভারতীয়) সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এবার হাটে জমায়েত হওয়ার পরিবর্তে অনলাইন মাধ্যম থেকে পশু কেনার পরামর্শ দিয়েছেন।
এ উদ্দেশে রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পশুর হাট পরিচালনা করছে। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৮ হাজার পশু কেনাবেচা হয়েছে। লেনদেন হয়েছে প্রায় ২০৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দিন যতই যাচ্ছে অনলাইনে বিক্রির পরিমাণ ততই বাড়ছে। এবার প্রায় ৫০ হাজার পশু বিক্রির মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে আশা করা হচ্ছে।
রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য মতে, রাজশাহী বিভাগে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ১৪২টি পশু কেনাবেচার সরকারি অনলাইন মার্কেট রয়েছে। সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এসব মার্কেট পরিচালিত হচ্ছে। এসব মার্কেটে এখন পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের প্রায় ৫০ হাজার গবাদিপশুর ছবিসহ বিবরণ আপলোড করা হয়েছে।
বেসরকারিভাবে ওয়েবসাইটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১ হাজার ১০৯টিরও বেশি পশুর মার্কেট রয়েছে। কোরবানির পশু ডিজিটাল হাট, অনলাইন পশুর হাট নওহাটা, মোহনপুর অনলাইন পশুর হাট, অনলাইন কোরবানির পশুর হাট জয়পুরহাট, পাবনা ই-বাজার, এমআরএফ গ্রুপ পাবনাসহ বিভিন্ন নামে এসব মার্কেট খোলা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী মহানগর ও ৯টি উপজেলায় গত ১ জুন থেকে অনলাইনে পশু বেচাকেনার প্ল্যাটফর্ম চালু হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৬ হাজার পশুর তথ্য আপলোড করা হয়েছে। বিক্রি হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার বেচাকেনা হচ্ছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে বিক্রির পরিমাণও বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশুর ছবি আপলোড করা হয়েছে পবা উপজেলায়। সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়েছে গোদাগাড়ী উপজেলায়।
রাজশাহী জেলা প্রশাসন বলছে, অনলাইনে পশুর হাটের কার্যক্রম পরিচালনায় উপজেলা পর্যায়ে ভেটেরিনারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে। যেসব খামারি বা কৃষকদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই বা অনলাইনে অদক্ষ তাদের পশুকে অনলাইনের আওতায় আনবে স্বেচ্ছাসেবক টিম। প্রয়োজনে তারা খামারিদের বাড়ি গিয়ে ছবি, ভিডিও ও পশুর মূল্যসহ সব তথ্য সংগ্রহ করবেন। এরপর ওই তথ্য ফেসবুক গ্রুপ ও সরকারি ওয়েবসাইটে পোস্ট দেবেন। এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্রেতারা নিজেদের সাধ ও সাধ্যমতো কোরবানির পশু বাছাই করে নিতে পারবেন।
পশু খামারিদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, অনলাইন মার্কেটে বড় খামারিরা বেশি অংশ নিচ্ছে। তবে এর বাইরেও অনেকে ব্যক্তি পর্যায়ে অনলাইনে পশু বিক্রি করছেন।
অনেক কৃষক ব্যক্তি উদ্যোগে, আবার কেউ কেউ কয়েকজন মিলে একেকটি হাটের আয়োজন করেছেন। খামারিদেরও রয়েছে পৃথক পৃথক অনলাইন পশুর হাট। তবে এতে পিছিয়ে থাকছেন ক্ষুদ্র ও পারিবারিক খামারিরা। এ কারণে এখনো প্রায় ৯০ শতাংশ পশু অনলাইনে মার্কেটে আসতে পারেনি। তবে গত দু’বছরে পশু কেনাবেচায় অনলাইন মার্কেটে যে ইতিবাচক সাড়া এসেছে তা আশাব্যাঞ্জক।
রাজশাহীর খামারি ও কৃষি উদ্যোক্তা আরাফাত রুবেল। তিনি অনলাইন মার্কেটের মাধ্যমে গত বছর থেকে তার খামারের পশু বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, অনলাইন মাধ্যমে পশু বিক্রিতে খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। গত সপ্তাহে খামারের কোরবানিযোগ্য ৬টি গরু অনলাইনে বিক্রি করেছি। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে গ্রাহকের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার ‘সওদাগর এগ্রো র্ফাম’সহ সরকারি অনলাইন মার্কেটেও পশুর প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করি। গ্রাহক পছন্দ অনুযায়ী অর্ডার দেয়।
জানতে চাইলে রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ইসমাইল হক বলেন, রাজশাহীর অনলাইন পশুর হাটে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। স্বাস্থ্যকর মাধ্যম হিসেবে অনেকেই এটাতে আসছেন। জেলার প্রায় প্রত্যেকটা উপজেলায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার নেতৃত্বে সরকারি উদ্যেগে একটি করে অনলাইন মার্কেট রয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে।
রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক উত্তম কুমার দাস বলেন, সারাদেশে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হবে। এর প্রায় ১০ শতাংশ অনলাইন মার্কেটে হচ্ছে। যেটা আগামীতে আরও বাড়বে।
করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনায় এ হাটের উদ্ভব। শুরুতে এটাকে অনেকেই অসম্ভব কাজ বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু এখন অনলাইন হাট বেশ সাড়া ফেলেছে।
বর্তমানে বিভাগে সরকারি-বেসরকারি প্রায় দেড় হাজারের মতো অনলাইন পশুর হাট রয়েছে। এছাড়া বিভাগের অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় এখন অনলাইন পশুর হাট রয়েছে।
ইউকে/এএস