নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ ‘লকডাউনের’ ফলে রাজশাহীর নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের রোজগার অনেকটা কমে গেছে। এতে সমাজের বেশিরভাগ মানুষই এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এ পরিস্থিতিতে পরিবারগুলোর ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য। ‘লকডাউনের’ সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিসিবির পণ্যে চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু টিসিবির ট্রাকে চাহিদার অনুপাতে পণ্য না থাকায় দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার পর ফিরে যেতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
ঈদের আগে রাজশাহী মহানগরের আট থেকে ১০টি পয়েন্টে ট্রাকে করে পরিবেশকরা পণ্য বিক্রি করলেও এখন তা হচ্ছে মাত্র পাঁচটি পয়েন্টে। গত ২৬ জুলাই থেকে মহানগরের সাহেববাজার বড় মসজিদ চত্বর, নওদাপাড়া আমচত্বর, ভদ্রা মোড়, সিঅ্যান্ডবি মোড় ও রেলগেটে পাঁচজন পরিবেশক পণ্য বিক্রি করছেন। রাজশাহী মহানগরের অন্য পয়েন্টগুলোতে বর্তমানে বিক্রি বন্ধ রয়েছে।
টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয় জানিয়েছে, মহানগরে পণ্য বিক্রির জন্য ৬০ জন পরিবেশক আছেন। পর্যায়ক্রমে তারা পণ্য বিক্রির সুযোগ পান। আজ যে পাঁচজন পণ্য বিক্রি করছেন তারা আবার ১২ দিন পর বিক্রির জন্য পণ্য পাবেন। একজন পরিবেশককে প্রতিদিন ৭০০ কেজি চিনি, ৬০০ কেজি সয়াবিন তেল ও ২০০ কেজি মসুর ডাল দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশকরা ট্রাকে করে ৫৫ টাকা কেজি দরে চিনি ও ডাল এবং প্রতিলিটার ১০০ টাকা দরে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন। সেখান থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৫ লিটার তেল ও ২ কেজি মসুর ডাল কিনতে পারেন।
টিসিবির কয়েকজন পরিবেশকের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, আগে রাজশাহী মহানগরে পরিবেশকদের প্রত্যেককে প্রতিদিন এক হাজার লিটার সয়াবিন তেল, ৭০০ কেজি চিনি ও ৪০০ কেজি মসুর ডাল দেওয়া হতো বিক্রির জন্য। এখন কঠোর ‘লকডাউন’ চললেও পরিবেশক যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে পণ্যের পরিমাণও। করোনা সংক্রমণরোধে ‘লকডাউনের’ দিন যত বাড়ছে টিসিবির পণ্যের চাহিদাও সেভাবে বেড়ে গেছে। বর্তমানে টিসিবির প্রতিটি পয়েন্টে মানুষের দীর্ঘ লাইন হয়। কিন্তু পণ্য স্বল্পতার কারণে সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয় না। প্রতিদিনই কিছু মানুষকে ফিরে যেতে হয়।
সরেজমিনে মহানগরের ভদ্রা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, টিসিবির পণ্যের ট্রাক আসার আগে সকাল ৯টায় থেকেই মানুষের দীর্ঘ লাইন। সবার অপেক্ষা টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্যের জন্য। পণ্য নিয়ে ট্রাক আসে সকাল সাড়ে ১০টায়। তারপর তিনটি পণ্য বিক্রি শুরু হয়।
লাইনের প্রথম দিকে দাঁড়ানো শ্রমজীবী সাইফুল আলম বলেন, গতদিন সাহেববাজার পয়েন্টে পণ্য কিনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু লাইনের পেছন থেকে ট্রাকের সামনে যেতেই পণ্য শেষ হয়ে যায়। তাই আজ সময়ের একটু আগে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি।
কামাল হোসেন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, সাহেব বাজারে একটি ছোট দোকান চালাতাম। ‘লকডাউনের’ কারণে দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকায় রোজগার নেই বললেই চলে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। আমরা তো কারও কাছে ত্রাণও চাইতে পারছি না। তাই একটু কম দামে পণ্য কিনতে এখানে এসেছি।
জানতে চাইলে টিসিব’র রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান রবিউল মোর্শেদ বলেন, করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রোধে রাজশাহীতে দীর্ঘদিন ধরে ‘লকডাউন’ চলছে।
এতে শহর ছেড়ে অনেক মানুষ গ্রামে চলে গেছে। এদিক বিবেচনা করে পরিবেশকের সংখ্যা ও পণ্যের পরিমাণ কমানো হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মেনে আমরা কাজ করছি। তবে চাহিদা বাড়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
ইউকে/এএস