নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমরোধে সারাদেশে ‘কঠোর লকডাউন’ চলছে। করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে সরকার মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে উৎসাহিত করছে। তবুও মানুষ যত্রতত্র অসচেতনভাবে চলাফেরা করে নিজেদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে রাজশাহীর উপকণ্ঠে থাকা পবা উপজেলার দারুসা বাজারসহ আশপাশের এলাকায় করোনা থেকে জীবন বাঁচানোর বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন এক আদিবাসী সাঁওতাল তরুণী। সারা দিন হ্যান্ডমাইক নিয়ে মাইকিং করে চলেছেন। বলছেন, ‘করোনাকে নয় ভয়, আমরা করব জয়। মাস্ক পরুন, নিরাপদে থাকুন। ’ রাস্তায় চলাফেরাকারী, রিকশাচালক, দিনমজুর ও নিম্নআয়ের যেসব মানুষের মুখে মাস্ক নেই, তাদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করছেন। এছাড়া খাবারও বিতরণ করছেন তিনি। দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই সচেতনতার বার্তা নিয়ে কাজ করছেন এ তরুণী।
করোনা সচেতনতায় আগে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করেছেন। এখন শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ আক্রান্ত বেশি হচ্ছে। তাই শহরের পর এখন তিনিও গ্রামমুখী হয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো গ্রামে যাচ্ছেন। সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষজনকে।
বার্তাবাহক তরুণীর নাম সাবিত্রী হেমব্রম। তিনি ২০১৮ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত জেলা সমবায় কর্মকর্তা সূর্য হেমব্রম ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি সুমিলা টুডুর মেয়ে তিনি। তারা নগরের হড়গ্রাম পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা।
যেখানে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা কম, মানুষ মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে উদাসীন, সেসব গ্রামে গিয়ে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছেন তিনি।
মাস্ক বিতরণও করছেন। শিশুদের হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে দিচ্ছেন সাবান। এ কাজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তিনি সঙ্গে পেয়েছেন শিক্ষার্থী প্রশান্ত মিঞ্জ, লিনা মিঞ্জ, এলিও মার্ডি, ফারজানা তিন্নী ও পুলিশ সদস্য স্যামুয়েল হাসদাকে।
এমন অভিনব কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবিত্রী হেমব্রম বলেন, করোনা ভাইরাস মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন স্থবির করে দিয়েছে। এ সময়ে মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেছি। তাই সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। আমার বড় ভাই সুবাস চন্দ্র হেমব্রম করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখন দেখেছি, স্বাস্থ্যবিধি মানলে কোনো সমস্যা হয় না।
তিনি আরও বলেন, বাজারে ও রাস্তায় মাইকিংয়ের সময় অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। মাস্ক বিতরণের সময় অনেকেই খাবারের সংকটের কথা জানান। কারণ ‘লকডাউনে’ মানুষের আয় কমে গেছে। অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের সাহায্য করার মতো এত অর্থ আমার কাছে নেই। তবে কেউ সহযোগিতা করলে আমি তাদের খাবার পৌঁছে দিতে পারব।
প্রতিদিনের কাজের বিষয়ে সাবিত্রী বলেন, একটি সংগঠন থেকে হ্যান্ডমাইকটি ধার করে সচেতনতার বার্তা দিচ্ছিলেন। পরে এক রাজনৈতিক নেতা তাকে একটি হ্যান্ডমাইক কিনে দেন। এতে আগের চেয়ে বেশি সুবিধা হচ্ছে তার। সচেতনতামূলক এ কাজের খরচ এখন পর্যন্ত নিজেই বহন করছেন। কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
সাবিত্রী রিমিল ড্যান্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইউএনডিপির স্বেচ্ছাসেবক, রুডো ইয়ুথ গ্রুপের সভাপতি, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি সবাইকে সচেতন করার জন্য মাঠে নেমেছেন। শেষ পর্যন্ত থাকতে চান বলেও জানান উদ্যোমী এ আদিবাসী তরুণী।
ইউকে/এএস