যেসব খাত থেকে বিপুল অর্থ পায় তালেবান

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর গত দুই মাসে একের পর এক এলাকা দখল করে নিচ্ছে তালেবান। ৮০ হাজার তালেবান যোদ্ধার মোকাবিলায় নাস্তানাবুদ তিন লাখ সেনা ও পুলিশ।

তালেবান বাহিনীর এমন সাফল্যের পেছনে ধর্মীয় উন্মাদনার পাশাপাশি বিপুল অর্থশক্তি বড় কারণ বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। সেই অর্থ আসে নানা পথ ধরে।

ফোর্বস পত্রিকায় ২০১৬ সালের তালিকায় বিশ্বের পঞ্চম ধনী জঙ্গিগোষ্ঠী ছিল তালেবান। ২০১৮ সালে তারা উঠে আসে দ্বিতীয় স্থানে। প্রথম স্থানে লেবাননের জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লা। তৃতীয় হামাস, চতুর্থ আল কায়দা, পঞ্চম ইসলামিক স্টেট।

২০১৮ সালে তালেবানের আনুমানিক সম্পদ ছিল ৮০ কোটি ডলার। মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুসারে, ২০২০ সালে তা দেড়শো কোটি ডলার হয়েছে।

সে বছর আফগান সরকারের মোট রাজস্ব আদায় ছিল ৫৫০ কোটি ডলার। এর ২ শতাংশ বরাদ্দ হয়েছিল প্রতিরক্ষা খাতে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দানে অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম পায় কাবুল।

তালেবানের অর্থ আমদানির বৃহত্তম উৎস হলো খনি। বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। দক্ষিণ আফগানিস্তানের অধিকৃত অঞ্চল থেকে নিকেল, টাংস্টেন, সোনা, মূল্যবান পাথর, প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করে তারা।

সাম্প্রতিক হিসেব বলছে, আফগানিস্তানের ৮০০ বৈধ খনির অর্ধেকেরও বেশি তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে। সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বৈধ খনিগুলো থেকেও নিয়মিত তোলা আদায় চলে তালেবানের।

মাদকের ব্যবসা এবং চোরাচালান থেকে বছরে আয় প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বস্তুত, নীলকর সাহেবদের ধাঁচেই অধিকৃত এলাকায় কৃষকদের জোর করে আফিম চাষ করায় তালেবান।

তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ড্রাগ তৈরির কারখানা রয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চক্রের। আদায় হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। মার্কিন বিমানহামলা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি কারখানাগুলো।

পশ্চিম এশিয়ার অনেক দেশেই আছে তালেবানের বেনামি ব্যবসায়ী শাখা। তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাসিন্দাদের নিয়মিত কর দিতে হয়। কৃষক, ছোট ব্যবসায়ী এমনকি পশুপালকদেরও নিস্তার নেই। এ বাবদ বছরে রোজগার প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা।

বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বাণিজ্য সংস্থার থেকেও নিয়মিত তোলা আদায় করে তালেবান। তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মোবাইল টাওয়ার বসানোর জন্যও সংশ্লিষ্ট পরিষেবা সংস্থাকে ‘মাসোহারা’ দিতে হয়।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে শান্তি বৈঠক চলাকালীন গত কয়েক বছরে জমি কেনাবেচা আর ইজারা দেওয়ার ব্যবসাতেও হাত পাকিয়েছে তালেবান। গত বছর এই খাতে এসেছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।

বছরে প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা বিদেশি অনুদান পায় তালেবান। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতার থেকেই মূলত ‘সরকারি-বেসরকারি’ অর্থ সাহায্য পৌঁছায়। আসে পাকিস্তান থেকেও।

সূত্র: আনন্দবাজার।

ইউকে/এএস