মিক্সড বা বুস্টার ডোজে ‘না’

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: দেশে করোনা টিকার মিক্সড ডোজ বা বুস্টার ডোজ নিয়ে এখনই ভাবতে নারাজ সরকার। বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টিতে সায় দিচ্ছেন না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বৈশ্বিকভাবে এখনো এ বিষয়ে পরীক্ষিত কোনো সমাধান আসেনি। কোনো কোনো দেশে স্বল্পমাত্রায় কিছুটা ট্রায়াল হলেও তা এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমলে নেয়নি।

বিশেষ ক্যাম্পেইনের আওতায় দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় গত ৭ আগস্ট। এই কর্মসূচি চলাকালে একই দিনে একাধিক ডোজ টিকা দেওয়া এবং কোথাও কোথাও প্রথম ডোজ এক টিকা আর দ্বিতীয় ডোজ অন্য টিকা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট টিকা গ্রহণকারীরা শারীরিকভাবে কোনো সমস্যায় পড়েননি। তার পরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাঁদের মনিটরিংয়ের আওতায় রেখেছে। টিকাসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটিও এই মনিটরিং জোরালোভাবে চালিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছে।

করোনা টিকার প্রথম ডোজ এক ব্র্যান্ডের ও দ্বিতীয় ডোজ আরেক ব্র্যান্ডের টিকা দিয়ে কোনো কোনো গবেষণায় তুলনামূলক বেশি অ্যান্টিবডি পাওয়ার খবর রয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বাংলাদেশেও এ নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক হয়েছে। তবে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশীয় টিকা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক গ্রুপের (নাইট্যাগ) মতামতকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। টিকা ব্যবস্থাপনায় জড়িতরা বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে এ বিষয়ে মতামতও চেয়েছেন।

নাইট্যাগের সিনিয়র এক সদস্য বলেন, সর্বশেষ শুক্রবারও মিক্সড ডোজ ও বুস্টার ডোজ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। সেখানে অনেক দেশের গবেষণা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মিক্সড ডোজ ও বুস্টার ডোজে সায় দেওয়া হয়নি। বলা হয়, মিক্সড ডোজে কোনো কোনো গবেষণায় অ্যান্টিবডি বাড়ার তথ্য পাওয়া গেলেও এখনো তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়নি। নিরাপত্তার বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত মিক্সড ডোজ না দেওয়ার পক্ষেই অবস্থান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।

ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, এখনো বিশ্বের বহু দেশ টিকাই পায়নি। অনেক দেশ টিকা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। এ অবস্থায় বুস্টার ডোজ দিতে গেলে বড় ধরনের মানবিক বৈষম্য তৈরি হবে। দেখা যাবে কেউ কয়েক ডোজ নিচ্ছে আর কেউ পাচ্ছে না। আবার বুস্টার ডোজের দীর্ঘমেয়াদি কোনো ক্ষতিকর দিক আছে কি না সেটিও এখন পর্যন্ত পরীক্ষিত নয়। এ কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এতে সায় দিচ্ছে না।

নাইট্যাগের আরেক সদস্য ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, ‘একদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার দিকে আমাদের নজর রয়েছে, তেমনি এ বিষয়ে এখনো কোথাও পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নেই। তাই আমরা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি মিক্সড ডোজে না যেতে।’

ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এবার ক্যাম্পেইনের সময় দেশে ভুলক্রমে কিছু ব্যক্তিকে দ্বিতীয় ডোজে অন্য টিকা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দিষ্ট বিভাগকে বলেছি ওই ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি মনিটরিংয়ে রাখতে। প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে তাঁদের সবার অ্যান্টিবডি টেস্ট করা, তাঁদের সার্বিক পরিস্থিতি নথিভুক্ত করে রাখাটা গবেষণারও একটি অংশ হবে। সামনে যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাসাপেক্ষ মিক্সড ডোজ দেওয়ার প্রশ্ন আসবে, তখন এই তথ্য কাজে লাগবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও নাইট্যাগের সায় না থাকায় আপাতত আমরা মিক্সড ডোজ বা বুস্টার ডোজ নিয়ে ভাবছি না। এখন বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে যেভাবে চলছে সেভাবেই যত দ্রুত সম্ভব বেশি মানুষকে সঠিক গাইডলাইন ধরে টিকা দিয়ে যাওয়া।’

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কভিড-১৯-এর টিকাকেন্দ্রে গত ১০ আগস্ট মোস্তাফিজুর রহমান সাদা (৫৬) নামের এক ব্যক্তিকে তাঁর প্রাপ্ত দ্বিতীয় ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়েছে। অথচ গত ১৪ জুলাই প্রথম ডোজ হিসেবে তাঁকে দেওয়া হয় সিনোফার্মের টিকা।

সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহীনুল ইসলাম জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম ডোজ এক টিকা আর দ্বিতীয় ডোজ অন্য গ্রুপের টিকা দেওয়ার সুযোগ নেই। মোস্তাফিজুরকে আবারও এক মাস পর অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হবে।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন আ ক ম আখতারুজ্জামান বলেন, টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড়ের কারণে এই ভুল হয়ে থাকতে পারে। তবে এতে রোগীর কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

এদিকে একই দিনে দুই ডোজ টিকা দেওয়া বা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ভিন্ন ব্র্যান্ডের টিকা দেওয়ার মতো ঘটনা ঢাকা ও গাজীপুরসহ দেশের আরো কয়েকটি স্থানে ঘটেছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থা মনিটর করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। অবশ্য একই দিনে একাধিক ডোজ টিকা নেওয়া সবাই ভালো আছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

ইউকে/এএস