নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা: অতিথি পাখির বাসা ভাড়ার টাকার চেক পেলেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের সেই বাগান মালিকরা। মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুরে বাঘা উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে সীমিত পরিসরে চেক তুলে দেওয়ার আয়োজন করা হয়।
ওই অনুষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ বাগান মালিকের হাতে সরকারের পক্ষ থেকে মোট ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। সেই পাঁচ আমবাগান মালিক হলেন-বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর এলাকার সফিকুল ইসলাম, খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের মুঞ্জুর রহমান, সানার উদ্দিন, শাহাদত হোসেন ও শিরিন আখতার।
এর মধ্যে সফিকুল ইসলাম ৪০ হাজার টাকার চেক, মুঞ্জুর রহমান ২ লাখ টাকার, শাহাদত হোসেন ৯ হাজার টাকার, সানার উদ্দিন ৪০ হাজার ও শিরীন আখতার ২৪ হাজার টাকার চেক পেয়েছেন। বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু।
এছাড়া অনুষ্ঠানে রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মেহেদীজ্জামান, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাহাত হোসেন, কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান, মৎস্য অফিসার আমিরুল ইসলাম ও বাঘা উপজেলা বন কর্মকর্তা জহুরুল হক উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন চারঘাট ফরেস্ট রেঞ্জার এবিএম আব্দুল্লাহ।
এর আগে গ্রামের আমবাগানের কয়েক হাজার শামুকখোল পাখিকে ১৫ দিনের মধ্যে তাড়িয়ে দেওয়ার নোটিশ দেন বাগান ইজারাদার আতাউর রহমান। তবে বাধ সাধেন স্থানীয় কিছু পাখিপ্রেমী। এ সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর পাখির আবাসস্থল রক্ষার উদ্যোগ নেয় রাজশাহী জেলা প্রশাসন। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত ৩০ অক্টোবর বাঘার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের ওই আমবাগান পরিদর্শনে যান। তারা পাখিদের বাসা ভাঙা যাবে না বলে জানান।
এছাড়া মহাপরিচালকের নির্দেশে একই দিন ঘটনাস্থলে যান র্যাব-৫ এর তৎকালীন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান। এসময় বাগানে থাকা পাখির বাসা ভাঙা যাবে না এবং এখন থেকে র্যাব বাগানটি পর্যবেক্ষণ করবে বলেও জানান। এরই মধ্যে বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারুমিতা রায়। এরপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে আদেশ দেন।
খোর্দ্দ বাউসা গ্রামকে কেন অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান হাইকোর্ট। পাশাপাশি অভয়ারণ্য ঘোষণা করলে ওই আমবাগান ইজারাদারদের কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তা ৪০ দিনের মধ্যে জানাতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরপরই জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে রাজশাহী জেলা প্রশাসন।
গত চারবছর থেকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধে রয়েছে। তারা বর্ষা শেষে এই বাগানে গিয়ে বাচ্চা ফোটায়। শীতের শুরুতে বাচ্চারা উড়তে শিখলে তাদের নিয়ে চলে যায়। এবার পাখিরা বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়েছে। তবে বাচ্চারা এখনও উড়তে শেখেনি। কিন্তু এবছর ইজারাদার আম উৎপাদনের জন্য বাগানের পরিচর্যা করতে চান।
গত ২৯ অক্টোবর তিনি বাসা ভেঙে আমগাছ খালি করতে শুরু করেন। একটি গাছে থাকা কিছু বাসা ভেঙেও দেন। তবে স্থানীয় কিছু পাখিপ্রেমী তাকে বাসা ভাঙতে বাধা দেন। পরে তাদের কারণে আমবাগান ইজারাদার আতাউর রহমান পাখিদের বাসা ছাড়ার জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন।
এর মধ্যে পাখিরা বাসা না ছাড়লে তাদের বাসা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন ইজারাদার।
ইউকে/এএল/এসএম